২২ বছর পর ‘সন্ত্রাসী’ তকমা থেকে তালেবানকে বাদ দিল রাশিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বৃহস্পতিবার তালেবানের ওপর থেকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আরোপিত তকমা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তালেবান এখন থেকে রাশিয়ায় বৈধভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে।
২০০৩ সাল থেকে তালেবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল রাশিয়া। ফলে এত দিন পর্যন্ত তালেবান সদস্যদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ রাশিয়ার আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর তালেবান দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে এবং এরপর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাশিয়ার কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে মস্কো। গত চার বছরে তালেবান কর্মকর্তারা একাধিকবার রাশিয়া সফর করেছেন। এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বলেছেন, “আফগানিস্তানে যেহেতু তালেবানই এখন ক্ষমতায়, তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলাটা প্রয়োজনীয়।”
চলতি বছরের মে মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্র ও বিচার মন্ত্রণালয় তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। পরে প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তর সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দেয়। গতকাল সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে আদালত।
আল জাজিরার একটি বিশ্লেষণে বলা হয়, সোভিয়েত আমলে (১৯৭৯–১৯৮৯) আফগানিস্তানে প্রায় এক দশক সেনা মোতায়েন রেখেছিল রাশিয়া, এবং সেসময় দেশটির গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। অতীতে তালেবানের সঙ্গে সংঘাতের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও মস্কোর সাম্প্রতিক অবস্থান পরিবর্তন তালেবানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৈধতা পাওয়ার পথে এগিয়ে দিতে পারে।
রাশিয়া ছাড়াও এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই তালেবানের প্রতি নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। ২০২৩ সালে কাজাখস্তান এবং পরের বছর কিরগিজস্তান তালেবানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার করে।
তবে এখনো কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। নারীদের অধিকার নিয়ে তালেবানের কঠোর অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তারপরও কাবুলে কূটনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে চীন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ইরান। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালে চীন আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অধীনে প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে—যা একপ্রকার কৌশলগত স্বীকৃতি বলেই ধরা হচ্ছে।
বিআলো/শিলি