৮ নভেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, আট বছর পর মা-ছেলের আলিঙ্গন
এম এ হালিম: ৮ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানকার কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, লন্ডনে তীব্র শীত পড়ার আগেই আমরা বেগম জিয়াকে সেখানে নিতে চাই। এ জন্য বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দরকার। সেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার চেষ্টা চলছে। সেখানে অবস্থান করছেন তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে সহসাই দেখা হচ্ছে মা-ছেলের। ছেলের সঙ্গে সবশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাজকীয় আমন্ত্রণে সপরিবারে ওমরা পালন করেছিলেন মা-ছেলে। এরপর কেটে গেছে আট বছর। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়নি মা খালেদা জিয়ার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগও পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। ফলে এই আট বছরে দেশের বাইরে কোথাও তার যাওয়া হয়নি।
জানা যায়, দলের নেতাদের কাছে যিনি কাণ্ডারী, কর্মীদের চোখে যিনি ভবিষ্যৎ, সেই তারেক রহমানের এখনও দেশে না ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিথ্যা মামলার দণ্ড নিয়ে ১৬ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তিনি। এখন একটি প্রশ্ন জোড়ালো হচ্ছে বিএনপির কর্মীদের মধ্য থেকে। মামলা প্রত্যাহার করে তাকে কেন দেশে ফেরানো হচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন তারা। তবে সব প্রক্রিয়া সেরে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান বিএনপি নেতারা এমন কথা বললেও আসলে কবে ফিরবেন তিনি সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। পরে তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরের বছর নির্বাচনের আগে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তারেক রহমান। এক সপ্তাহ পর ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সেই থেকে তিনি লন্ডনে রয়েছেন। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোও মুক্তি পাওয়ার পর মালয়েশিয়া যান। তিনি সেখানে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে মারা যান। ফলে বিএনপিতে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে এখন তারেকই রয়েছেন সামনের সারিতে।
এ প্রেক্ষাপটে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৃহৎ দলটির ভাবি কর্ণধার তারেক রহমান এখন দেশে ফিরলে কি তাকে কারাগারে যেতে হবে- এমন শঙ্কায় বিএনপির সহআইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলাগুলো থেকে খালাস বা অব্যাহতি না দিলে দেশে আসলে কিছুদিনের জন্য হয়তো তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। তবে সরকার চাইলে সাজাপ্রাপ্ত মামলাগুলো আপিলের শর্তে জামিন পাবেন, এমন কোনো নির্বাহী আদেশ পেলে দেশে আসতে তার কোনো বাধা নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ মিথ্যা মামলাগুলোর দণ্ড স্থগিত করে তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দেওয়া। এ বিষয়ে দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমান আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তার সব মামলা আইনিভাবেই মোকাবেলা করে যথাসময়ে দেশে ফিরবেন তিনি। এমন প্রত্যয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১ উপ-ধারার বিধান মতে সরকার যে কোনো ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া যে কোনো ব্যক্তির মামলা থেকে খালাস, প্রত্যাহার বা দণ্ড স্থগিত করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটে না। সংবিধানে সরকার ও রাষ্ট্রপতিকে এ সংক্রান্তে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানের সকল রাজনৈতিক মামলা সম্পর্কে অতিমন্থর গতিতে চলছে বলেও ইতোমধ্যে বিএনপির অনেক নেতা মন্তব্য করেছেন।
শুধু রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করার জন্যই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২০১৫ সালে তার ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর জানাযায় অংশ নিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের পর থেকে তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতায় বার বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন, এসব হৃদয়বিদারক মর্মস্পর্শী সংবাদ ছেলে তারেক রহমান বিদেশ বিভুইয়ে থেকে শুনেছেন এবং নীরবে মমতাময়ী মায়ের জন্য অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। মায়ের কাছে আসতে পারেননি, মুমূর্ষু মায়ের সেবা করতে পারেননি। এটা একজন সন্তানের জন্য যে কত বড় বেদনার কেবলমাত্র ভুক্তভোগী সন্তানই তা জানে। বেদনার সব সাগর-নদী পেরিয়ে একজন মজলুম রাজনীতিক তারেক রহমানের সঙ্গে তার মমতাময়ী মায়ের শিগগিরই সাক্ষাৎ হচ্ছে লন্ডনে। যেখানে মা-ছেলের হৃদয়স্পর্শী আলিঙ্গনে শীতল হবে উভয়ের শোক- তাপের ইতিহাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শে বিশ্বাসী সকল কর্মী, সমর্থক এবং নেতারা এমনটাই প্রত্যাশা করছেন।
বিআলো/তুরাগ