‘অনুতপ্ত’- নাটকে পার্থ শেখের সংযত অভিনয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প
বিনোদন প্রতিবেদক: বাবা-ছেলের সম্পর্কের সূক্ষ্ম টানাপড়েন, আত্মোপলব্ধি এবং নীরব ভালোবাসার গল্প নিয়ে নির্মিত আবেগঘন নাটক ‘অনুতপ্ত’ বর্তমানে দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মধ্যবিত্ত জীবনের বাস্তবতা আর সম্পর্কের দ্বন্দ্ব-অনুরণনে সাজানো এই নাটক সব শ্রেণির দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
২৭ জুলাই সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাওয়া নাটকটি মাত্র দুই দিনেই দেখে ফেলেছেন ২০ লাখের বেশি দর্শক। নাটকটির কমেন্ট সেকশন জুড়ে দেখা গেছে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া—পাঁচ হাজারের বেশি মন্তব্যে দর্শকরা তাদের মুগ্ধতা ও প্রশংসা প্রকাশ করেছেন।
নাটকের গল্পে দেখা যায়—বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে রিশাদের প্রতিদিনকার প্রয়োজন মেটাতে বাবা রফিক তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেন, দেন সময়-অসময়ে টাকা। সবাই জানে রফিক একজন কর্পোরেট চাকরিজীবী। কিন্তু হঠাৎ করেই রিশাদ জানতে পারে, তার বাবা দিনে সেলসম্যান, আর রাতে আড়তে শ্রমিকের কাজ করেন। এই নির্মম বাস্তবতা জানতে পেরে রিশাদের মধ্যে জন্ম নেয় গভীর অনুতাপ। এরপর সে নিজেও রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়ে বাবার কষ্টের ভাগীদার হওয়ার চেষ্টা করে।
গল্পে রয়েছে প্রেমের একটি উপখ্যানও। রিশাদ প্রেম করে মালিহা নামে এক তরুণীর সঙ্গে। কিন্তু ছন্দপতন ঘটে তখন, যখন সে জানতে পারে—মালিহার বাবা রফিকের আড়তের মালিক। এই তথ্য জানার পর ঘটনাপ্রবাহ গড়ায় এক গভীর আত্মোপলব্ধির দিকে।
রিশাদ চরিত্রে পার্থ শেখ ছিলেন অত্যন্ত সাবলীল। সংযত সংলাপ, চোখের ভাষায় অনুভূতির প্রকাশ এবং ভেতরকার দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম চিত্রণে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন একজন সন্তানের অপরাধবোধ, ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের আন্তরিক মিশ্রণ। দর্শকদের মতে, নাটকটির অন্যতম শক্তিশালী দিক ছিল পার্থ শেখের অভিনয়।
ইন্তেখাব দিনার রফিক চরিত্রে তুলে ধরেছেন একজন নিবেদিতপ্রাণ পিতার প্রতিচ্ছবি, যার জীবনের সব কষ্ট সন্তানের হাসির পেছনে উৎসর্গ করা। মায়ের ভূমিকায় দীপা খন্দকার তার সংযত অভিমান ও অস্ফুট ভালোবাসা দিয়ে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। আরও অভিনয় করেছেন মালাইকা চৌধুরী, শিবা শানু, তানজিম অনিক প্রমুখ।
নাটকটির রচয়িতা ও নির্মাতা কেএম সোহাগ রানা, যিনি এর আগে ‘দেনা-পাওনা’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছিলেন। ‘অনুতপ্ত’-এও তিনি দেখিয়েছেন পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, আত্মগ্লানি ও ভালোবাসার আন্তরিক রূপ।
নাটকের প্রতিটি দৃশ্যেই রয়েছে বাস্তবতার ছাপ। সংলাপ ছিল মেপে বলা, আবেগপ্রবণ কিন্তু অতিনাটকীয় নয়। ‘অনুতপ্ত’ শুধু একটি নাটক নয়—এটি একটি আত্মবিশ্লেষণের আয়না, যা মনে করিয়ে দেয়: ভুল স্বীকার, অনুতাপ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়াও ভালোবাসারই এক নিঃশব্দ ভাষা।
বিআলো/তুরাগ