অবশেষে লন্ডনে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত, অ্যাম্বুলেন্স এলে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া
বিআলো ডেস্ক: মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার। কাতার থেকে আসা বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় অবতরণ করলেই যেকোনো সময় তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, কাতার থেকে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি টেকনিক্যাল জটিলতায় দেরিতে পৌঁছাতে পারে। বিকল্প হিসেবে আরও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে তিনি জানান। তিনি নিজেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডন যাচ্ছেন। এদিকে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাবেন এবং পরে খালেদা জিয়ার সাথে লন্ডনে যাবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকায় এসে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে শাশুড়ির কাছে যাবেন। লন্ডনে পৌঁছামাত্রই খালেদা জিয়াকে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করানো হবে।
সূত্র জানায়, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের নিরাপত্তায় হেলিকপ্টারে তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। সেখান থেকেই যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। ইতোমধ্যেই বিমানবন্দর এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
যদি কাতারের আমিরের প্রদত্ত বিশেষ সুবিধাযুক্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সময়মতো পৌঁছে, তবে দুই পুত্রবধূসহ ছয়জন চিকিৎসক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা সদস্য মিলিয়ে মোট ১৫ জন তার সাথে থাকবেন। লন্ডনে পৌঁছে দীর্ঘ সাত মাস পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন তারেক রহমান।
তার আশু সুস্থতা কামনায় আজ দেশের মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিন দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্রিফিংয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বৃহস্পতিবার গভীর রাত অথবা শুক্রবার ভোররাতেই কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডনে পাঠানো হবে।
মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যাত্রাপথে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন, যাতে বিমানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। তিনি জানান, সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
দুপুরে গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স বিমানটি ঢাকায় পৌঁছাবে এবং শুক্রবার ভোরেই লন্ডন যাত্রা শুরু হবে। ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে থাকা খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল কিন্তু উন্নতির তেমন লক্ষণ নেই বলে জানান তিনি।
চিকিৎসা বোর্ডে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সদ্য যোগ দিয়েছেন চীনের চারজন চিকিৎসক এবং যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড বেলে। তারা সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরেই বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতেও তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং চার মাস পর দেশে ফেরেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, এবার তার সঙ্গে লন্ডনে যাচ্ছেন মোট ১৫ জন, যার মধ্যে রয়েছেন দুই পুত্রবধূ, চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মী ও ব্যক্তিগত সহকারীরা।
চিকিৎসা শেষে তিনি কবে দেশে ফিরতে পারবেন সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। তার অসুস্থতা নিয়ে দলের ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান তিনি। এরপর থেকে বেশির ভাগ সময়ই তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বিদেশে নেওয়ার আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি আগের সরকারের সময়।
চিকিৎসকরা আশা প্রকাশ করেছেন, আল্লাহর রহমতে তিনি এবারও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন।
সরকার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুক্রবার দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে তার আরোগ্য কামনায় প্রার্থনার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে।
বিআলো/শিলি



