অবহেলিত মানুষের পাশে নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী: শাহাদাৎ হোসেন কাজল মোল্লা
এম এ মান্নান: প্রতিটি মানুষের সফলতার মূলে রয়েছে ধৈর্য, নিষ্ঠা, সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস। আজকের দিনে সমাজে যারা সফল হয়েছেন তাদের এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে ব্যর্থতা, ত্যাগ এবং সংগ্রামের এক দীর্ঘ ইতিহাস। আমরা সবাই বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত সফল মানুষদের নাম জানি।
কিন্তু তাদের সাফল্যের নেপথ্যের গল্পগুলো কতটুকু জানি? আজকে আমরা এমন একজন মানুষকে নিয়ে আলোচনা করব যিনি জীবনের নানা সংগ্রাম, চড়াই-উতরাই, চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং সফলতার শিখরে পৌঁছেছেন। তিনি হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন কাজল মোল্লা। জীবনযুদ্ধে জয়ী এই সৈনিক যিনি নিজের কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন নিজের সফলতা। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন পরপোকারী।
শিক্ষকরা তার জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলে কাজল মোল্লা একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে সমাজের অসহায়, দুস্থ মানুষের সেবা এবং তাদের কল্যাণে কাজ করার কথা বলতেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
শাহাদাৎ হোসেন কাজল মোল্লা ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বড় হওয়াই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জীবনের বাস্তবতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে চাকরি করে তিনি কখনও সফল হতে পারবেন না।
আর তখন থেকেই জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে তিনি নেমে পরেন। যেখানে তাকে সহ্য করতে হয়েছিল কঠোর পরিশ্রম এবং অবর্ণনীয় কষ্ট। জীবনের কঠোর বাস্তবতা মেনে নিয়ে ১৯৮০-এর দশকে তিনি বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯/১ মেরাদিয়া খিলগাঁও সেলিনা কমিশনারে বাড়ি থেকে তার ব্যবসায়ী জীবনের পথ চলা শুরু।
প্রথমে একটি মুদি দোকান দেন। ব্যবসার প্রথম দিকে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আর্থিক সংকট, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকা সত্বেও তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। ব্যবসার শুরুতে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকলেও কাজল মেম্বর কখনো পিছু হটেননি। নিজের সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন এবং ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
শাহাদাৎ হোসেন কাজল মোল্লা একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি।
১৯৯৮ সাল থেকে রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের ৩ বারের অধিক সময় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৮ বছর ইউপি সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সমাজসেবক এবং মানবিক কাজের জন্যও তিনি এলাকায় সুপরিচিত। তার ব্যবসার আয় থেকে তিনি অনেক মানবিক এবং সামাজিক কাজে ব্যয় করে থাকেন।
সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখার মাধ্যমে তিনি একজন দায়িত্বশীল সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এসএম ইলেক্ট্রনিক্স ও কাজল এন্ড কো : কনসালটেন্সি ফার্মে অনেক বেকার ছেলে মেয়েকে তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্টানের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ঢাকা কর অঞ্চল-৫, সার্কেল ৯৭ এর একজন তিনি নিয়মিত করদাতা।
তার ৪ সন্তান, দুই ছেলে দুই মেয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত। জীবনের এই সফলতা শুধুমাত্র তার নিজের নয়, এটি তার পরিবারের সকল সদস্যের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফল। তার জীবন কাহিনি আমাদের শিক্ষা দেয় যে জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতা এক একটি শেখার সুযোগ এবং প্রতিটি সংগ্রাম সাফল্যের দিকে এক একটি ধাপ।
তার জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করে, সাহস জোগায় এবং শিখায় যে কোন বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব যদি থাকে আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম। কাজল মোল্লার মতন একজন সংগ্রামী মানুষকে দেখে আমরা উপলব্ধি করি যে, সফলতা কোনো রাতারাতি অর্জিত জিনিস নয়; এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা শুধুমাত্র অধ্যবসায় এবং দৃঢ় মনোবলের দ্বারা সম্ভব। কাজল মেম্বরের জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও নিষ্ঠা।
এই গুণগুলোর জন্যই তিনি সকল বাধাকে জয় করতে পেরেছিলেন। দূরদর্শী পরিকল্পনা, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং কর্মীদের প্রতি আন্তরিকতার কারণে তিনি সফল ব্যবসায়ী হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কাজল মোল্লা তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
কাজল মোল্লা আমাদের সকলের জন্য এক প্রেরণার নাম, যার জীবন যুদ্ধ ও সাফল্যের কাহিনি আমাদের সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে পরিশ্রমই সৌভগ্যের প্রসূতি। বর্তমানে কাজল মোল্লা শারিরিকভাবে অসুস্থ। ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বরে তিনি স্ট্রোক করেন। ধানমন্ডি আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর ডা. ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশির অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আশুরোগমুক্তি কামনায় তিনি সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
বিআলো/এফএইচএস