অবৈধ নদী ভরাট বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা, গণমাধ্যমের নজরদারি সফল
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ধরন্তি বিল (আকাশী হাওর) ও সংলগ্ন নদীতে চলছিল অবৈধ মাটি ফেলে দখল কার্যক্রম। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে হাওর ও নদী ভরাটের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আনে দৈনিক বাংলাদেশের আলো। প্রতিবেদনের পর বিষয়টি প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের নজরে আসে এবং দ্রুত নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’ দীর্ঘদিন ধরে এই দখল-বিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল। সংগঠনটির আহ্বায়ক শামীম আহমেদ হাওর দখলের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পায়।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (তারিখ) দুপুরে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসাইন অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নদী ভরাটে নিয়োজিত শাকিল আহমেদ (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ব্যবহৃত বেকু জব্দ করে পুলিশের জিম্মায় নেওয়া হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে ভরাটকৃত মাটি সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় নেই। নদী দখল বা ভরাটের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’ এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে জানায়, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ দেখালো, সঠিক তথ্য প্রকাশ করলে পরিবর্তন সম্ভব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ভরাট কার্যক্রমের মূল হোতা এস.এম অলিউল্লাহ, যার বাড়ি গোপালগঞ্জে। সাইনবোর্ডে মালিক হিসেবে লেখা রয়েছে তার ছেলে এস.এম ওসমান উল্লাহর নাম। স্থানীয়রা জানায়, অতীতে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করতেন।
‘ দৈনিক বাংলাদেশের আলো’-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, হাওর ও জলাভূমিতে মাটি ফেলে ভরাটের কারণে জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় কৃষিজ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংবাদ প্রকাশের পর জনমত সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসনের তৎপরতায় অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়।
স্থানীয়রা জানান, এমন সাংবাদিকতা না হলে হয়তো হাওর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেত। প্রশাসনের অভিযান আমাদের আশার আলো জ্বালিয়েছে।
পরিবেশবাদীরা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ স্থায়ী সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ প্রাকৃতিক জলাধার দখলের সাহস না পায়।
বিআলো/এফএইচএস