অস্ট্রেলিয়ায় কিংবদন্তি সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক স্মরণসভা
জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
সালাম মাহমুদ: আলো ছড়িয়ে যিনি নিভে গেলেন আড়ালে—বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও শিল্প-সংস্কৃতির পথিকৃত প্রয়াত ফজলুল হক (মনি চৌধুরী)। তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আয়োজন করা হলো জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল।
টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) অস্ট্রেলিয়া শাখা এবং ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টার অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে এই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাব অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ও ভয়েস অব সিডনি সম্পাদক অর্ক হাসান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডায়াসপোরা শিশু-বিষয়ক সাংবাদিক কে. এম. ধ্রুব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডকুমেন্টারি নির্মাতা তানজি তমা।
স্ট্রেলিয়ায় প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক স্মরণে জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সালাম মাহমুদ:
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) অস্ট্রেলিয়া শাখা ও ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টার অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক-এর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রাব অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ও ভয়েস অব সিডনি সম্পাদক অর্ক হাসান। সঞ্চালনায় ছিলেন ডায়াসপোরা শিশু-বিষয়ক সাংবাদিক কে এম ধ্রুব। স্মরণসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডকুমেন্টারি নির্মাতা তানজি তমা।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাচসাস-এর প্রাক্তন সভাপতি ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুর রহমান, ট্রাব কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাম মাহমুদ, ট্রাব কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক এস এম নাসির, ট্রাব ইন্ডিয়া শাখার সভাপতি ও ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টারের প্রস্তাবিত সভাপতি ড. নটরাজ রায়, ট্রাব যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি এবং ট্রাব ইউরোপ শাখার সভাপতি আবু তাহের। এছাড়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আতাউর রহমান, জহির রায়হান স্মৃতি সংসদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি তৌহিদ হাসান, এক্টিভিস্ট রেট্রো মুবিন ও উদ্যোক্তা শাকিল শিকদার। আলো ছড়িয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই মহান মানুষের বিদেহী আত্মার প্রতি দোয়ার মাধ্যমে স্মরণসভা শেষ হয়।
প্রয়াত ফজলুল হক (মনি চৌধুরী) ছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃত। প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন তথা বর্তমান উত্তরবঙ্গের সমৃদ্ধ মাটি ও মানুষের মাঝে জন্ম নেওয়া এই মেধাবী মানুষ পরে হয়ে ওঠেন বৃহত্তর বাংলার সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি যখন সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ ও চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন, তখন চলচ্চিত্র পত্রিকার সম্পাদক কিংবা চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া ছিল অপ্রত্যাশিত ও সাহসিকতার বিষয়। তাঁর সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’ পত্রিকা তৎকালীন সময়ে সৃজনশীলতা, ফটোগ্রাফি, আর্টওয়ার্ক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ছিল অনন্য ও উন্নত মানের। গবেষকরাও যার মান দেখে আজও বিস্মিত হন। বৃহত্তর বঙ্গে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃত সম্পাদক হিসেবে তাই তিনি সর্বত্র সম্মানিত।
তাঁর নির্মিত ‘প্রেসিডেন্ট (চৎবংরফবহঃ)’ চলচ্চিত্রটি বৃহত্তর বঙ্গের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। চলচ্চিত্রটি দেশ সম্পর্কে শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় শুটিং করা হয়। শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত ‘ফজলুল হক স্মৃতি পদক’, যা প্রতিবছর চিত্রজগত ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রদান করা হয়। তাঁর স্মরণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) একটি প্রধান অডিটোরিয়ামও তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের জীবনসঙ্গী। তিনি ৫০টিরও বেশি উপন্যাস ও ৪০০+ ছোটগল্পের রচয়িতা এবং বাংলা একাডেমি স্মারক সাহিত্য সম্মাননাপ্রাপ্ত। তাঁদের সন্তানরাও বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় সুপরিচিত মুখ। তাঁদের পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর—চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শিশু সাহিত্যিক এবং একুশে ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। তিনি শৈশবে তাঁর বাবার নির্মিত ‘প্রেসিডেন্ট’ চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। আজ তিনি প্রভাবশালী চলচ্চিত্র প্রযোজক, গল্পকার ও শিশুতোষ বিনোদনের পথিকৃত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া তাঁদের অন্য সন্তানরা—কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা মাহমুদ কাকলী—সমানভাবে দেশের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁর বাবা-মা ছিলেন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব—পিতা এফ মাহমুদ এবং মাতা এফ জাহান।
ফজলুল হক ২৬ মে ১৯৩০ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৬ অক্টোবর ২০০৩ সালে কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর পেশাজীবন ১৯৫০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সাংবাদিকতা, প্রযোজনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ—এই তিনটি অঙ্গনে রেখে গেছেন কালজয়ী উত্তরাধিকার। বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি ইতিহাসে তিনি চিরসম্মানিত নাম।
আজ আলো ছড়িয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই মহান ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করে প্রবাসী সাংবাদিক ও সংস্কৃতিসেবীরা বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও শিশু চলচ্চিত্রের ভিত্তি তাঁর অনন্য অবদানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি জানানো হয় গভীর শ্রদ্ধা ও দোয়া।
বিআলো/তুরাগ



