অস্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা, শুরুতেই প্রযুক্তিগত বিপর্যয়
বিআলো ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের নিচে শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সি ইসাবেল দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে কয়েক মিনিটেই বয়স যাচাই পদ্ধতি পাশ কাটানো যায়। স্ন্যাপচ্যাট বয়স প্রমাণ চাইলে তিনি মায়ের ছবি ক্যামেরায় ধরে সহজেই ভেরিফিকেশন পার হয়ে যান।
ইসাবেলের মা মেল এতে বিস্মিত নন; তিনি মেয়ের অ্যাপ ব্যবহারে নজরদারি রাখতেন, তবে নতুন আইন শিশুদের সুরক্ষা দেবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু দ্রুতই এসব প্রত্যাশা ভেঙে পড়েছে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে। বাবা-মা বলছেন, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলো শিশু সুরক্ষায় ব্যর্থ। টিলি নামের ১৫ বছর বয়সি কিশোরীর আত্মহত্যার পর প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই- আর কত মৃত্যু হলে ব্যবস্থা নেবে প্ল্যাটফর্মগুলো?
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স ১৬ নির্ধারণ করেন; শিশু বা অভিভাবকদের শাস্তি নয়, বরং প্ল্যাটফর্মকে ‘যৌক্তিক পদক্ষেপ’ নিতে হবে। ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা হতে পারে। তবে আইন পাস হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে পরিষ্কার পরিকল্পনা ছিল না।
সরকারি ট্রায়াল রিপোর্ট বলছে, প্রত্যেক বয়স যাচাই পদ্ধতিরই সীমাবদ্ধতা আছে। আইডি যাচাই সবচেয়ে নির্ভুল হলেও অধিকাংশ ব্যবহারকারী সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যক্তিগত নথি দিতে চান না। ফেস স্ক্যান বা আচরণ বিশ্লেষণ- দুটোই বয়স নির্ধারণে ভুল করে। এমনকি ২২ ডলারের হ্যালোইন মাস্ক দিয়েও ফেস স্ক্যান প্রযুক্তি ধোঁকা দেওয়া গেছে।
এদিকে ভিপিএন, বিকল্প অ্যাপ, পিতামাতার ইমেইলসহ নানা উপায়ে কিশোররা নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটানোর পদ্ধতি ছড়িয়ে দিচ্ছে অনলাইনে। স্ন্যাপচ্যাটও স্বীকার করেছে বাস্তবায়নে আছে বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এক অন্তহীন “হোয়্যাক-এ-মোল” খেলা হতে যাচ্ছে।
অনেকে মনে করেন, বড় প্ল্যাটফর্মগুলো তুলনামূলক নিরাপদ ব্যবস্থা দিতে পারে; ছোট প্ল্যাটফর্মে এসব সুরক্ষা নেই। পাশাপাশি গবেষণা বলছে, এলজিবিটিকিউ+, নিউরোডাইভারজেন্ট শিশু ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিশোরদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কখনও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তার উৎস।
সাবেক শিশু কমিশনার অ্যান হল্যান্ডস বলেন, ১৬ বছর কোনো যাদুকর সীমা নয়। এই আইন একা সমস্যার সমাধান করবে না। সরকার বলছে, এটি কেবল শুরু; সামনে আসছে আরও কঠোর ‘ডিজিটাল ডিউটি অব কেয়ার’ আইন।
বিরোধীরা বলছেন, বয়সসীমা নয়- ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ ডিজাইন এবং ডিজিটাল শিক্ষা বাড়ানোই উচিত ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ১০০% শিশু দূরে রাখা সম্ভব না হলেও বড় অংশ দূরে থাকলে সামাজিক আচরণ বদলাতে পারে। তবে ইসাবেলের মতো অনেকেই বলছে, এক প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হলে তারা অন্যটিতে চলে যাবে।
ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়- এই আইন আদৌ কোনো পরিবর্তন আনবে, নাকি শুরু হলো একটি দীর্ঘ সংগ্রামের নতুন অধ্যায়?
বিআলো/শিলি



