অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ছে পদ্মা ও তিস্তায়, বন্যার শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে জুলাই থেকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়তে শুরু করেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া রাজশাহীতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি উঠেছে। নগরীর টি-গ্রোয়েনের নিরাপত্তায় সেখানে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া তিস্তার পানি বেড়ে রংপুর ও লালমনিরহাটে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপারের বাসিন্দারা। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
জানা গেছে,পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। বসবাসের ঘরবাড়ি এখনও প্লাবিত না হলেও বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন পদ্মা নদীসংলগ্ন উপজেলার চার ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
এদিকে গতকাল ও সোমবার তিস্তার উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে লালমনিরহাট পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে দুপুরের পর পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় পানিপ্রবাহ অপরিবর্তিত ছিল বলে জানিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, আদিতমারীর মহিষখোঁচা ও সদর উপজেলার গোকুণ্ডা, পঞ্চগ্রাম ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কিছু অঞ্চল, রংপুরের তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গঙ্গাচড়া সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ব্লক ধসে গেছে। এতে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে সেতু ও রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের যোগাযোগের সড়ক।
লালমনিরহট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ বছর তেমন বন্যা দেখা দেয়নি তিস্তা নদীতে। যে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা স্বাভাবিক হিসেবে দেখছি। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সমস্যা কেটে যাবে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকায় জেলা প্রশাসন, জেলা কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধির কারণে তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’
বিআলো/শিলি