আকাশে যত তারা, আইনে তত ধারা: অ্যাটর্নি জেনারেল
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিক দমনে সবই ব্যবহৃত হয় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ ও দমনের জন্য শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই নয়, রাষ্ট্রের হাতে আরও বহু আইনি পথ খোলা। তিনি বলেন, আকাশে যত তারা, আইনে তত ধারা।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা’ শীর্ষক সেশনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,মঅনেকে মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক দমনের হাতিয়ার। কিন্তু আমার দেখায়—রাষ্ট্র চাইলে আরও অনেক আইন ব্যবহার করে সাংবাদিকদের চাপে ফেলতে পারে। রাষ্ট্রের হাতে অন্য কোনো উপায় না থাকলে সহজেই সেডিশন (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারার আশ্রয় নেওয়া হয়।
তিনি মনে করেন, এই প্রবণতা বদলাতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক নির্বাহীদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। কারণ–শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
আসাদুজ্জামান বলেন, দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা, ৫০০ ধারায় শাস্তি—১৮৬০ সাল থেকেই এসব দিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব।
সঙ্গে আছে টরশিয়াস লায়াবিলিটি—যেখানে সিভিল কোর্টে ক্ষতিপূরণের মামলা করা যায়।
কিন্তু এগুলো দ্রুত প্রয়োগ করা যায় না বলেই সময় সময় নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছে—যেমন ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন।
তার ভাষায়, রাষ্ট্র চাইলে বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করেই একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করতে পারে—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলেও।
তিনি আরও জানান, এই আইনে প্রথম সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয় ১৯৭৫ সালে—দৈনিক হলিডের সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান। একই বছর মুখপাত্র পত্রিকার সম্পাদক ফাইজুর রহমানও গ্রেপ্তার হন এবং পাঁচটি পত্রিকাকে শোকজ করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, আমি এমন একটি মামলা পরিচালনা করেছি, যেখানে ১৭ বছরের একটি মেয়েকে দুই বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল। হাইকোর্টে জামিন চাইলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন আমি জামিন চাইছি। তারপরও জামিন হয়নি। অনেক পরে সে মুক্তি পায়।
তিনি বলেন, এটি সরকারের নির্দেশে হয়নি বলেই তিনি বিশ্বাস করেন- তখনও মনে হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির বিবেক বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাই শুধু আইন সংশোধন করলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে—এমনটা আমি মনে করি না।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার হন, তেমন নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নেও শক্ত কণ্ঠ তুলুন। সাংবাদিক–নাগরিক–রাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ তৈরি করতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে সিএসএ (সাইবার নিরাপত্তা আইন) ও সিএসও (সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ) নিয়ে সিদ্ধান্ত তারা নেবে। তবে সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইন থেকে সরে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
তদন্তাধীন ও বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে তিনি জানান, প্রয়োজনে হাইকোর্টে পাঠানোর উদ্যোগ আমি নিজেই নেব।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক-স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা আছে—তার বাস্তব প্রয়োগ চাই। যুক্তিসঙ্গত সীমা বজায় রেখেই সত্য বলা যাবে—এমন একটি ভয়হীন সমাজ প্রয়োজন।
শেষে তিনি উল্লেখ করেন. নাগরিক অধিকারের জন্য প্রয়োজন হলে জীবন দিতেও প্রস্তুত।
বিআলো/এফএইচএস



