আগামী ১০দিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোয় করোনা পরীক্ষা আবার শুরু হচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রধান হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়াতে কাজ করছে। বর্তমানে, খুব কম সরকারি হাসপাতালই করোনা পরীক্ষা করে। গত মাসে কোভিড সংক্রমণের হার ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘ বিরতির পর গত ৫ জুন করোনার কারণে একজনের মৃত্যুর সরকার এই পরীক্ষা সুবিধা বাড়াতে যাচ্ছে।
করোনা শনাক্তের কিট সংগ্রহে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে কিছু কিট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। গত ১০ জুন মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জরুরি চাহিদার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২৮ হাজার দ্রুত শনাক্ত কিট দিয়েছে। গতকাল আরও ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের কাছে ১ লাখ আরটিপিসিআর কিট ও ৫ লাখ দ্রুত শনাক্তকরণ কিট চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে কিট বিক্রি করত, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর পাশাপাশি ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ জনের। পরীক্ষা হওয়া ১০১ জন ও শনাক্ত ১৩ জনের সবাই ঢাকা শহরের। এর অর্থ ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না।
এক সপ্তাহে একাধিক জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরে। কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় এ মাসে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, একজন রোহিঙ্গা শিবিরের। কক্সবাজারে আরটিপিসিআর করার সুযোগ আছে। তবে দ্রুত করোনা পরীক্ষার কিট নেই।
চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় গত ১০ দিনে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরটিপিসিআর থাকলেও জেলায় কোনো দ্রুত পরীক্ষার কিট নেই। বরিশাল বিভাগের কোনো জেলায় করোনা পরীক্ষার কোনো ধরনের কিট নেই বলে বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। সিলেট জেলাতেও কোনো পরীক্ষার কিট নেই বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, যতটুকু পরীক্ষার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ দ্রুত ও বেশি ছড়িয়ে পড়লে তা ঝুঁকি বাড়াবে। সুতরাং সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিপর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো পর্যন্ত বিশেষ কোনো সতর্কতা জারি করেনি। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২, ৪, ৬ ও ৮ জুন স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনলাইনে করোনা বিষয়ে সভা করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলার সব সিভিল সার্জনকে, সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কী আছে, টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে কীভাবে তা দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা হচ্ছে।
টিকা নিয়ে সংশয়:
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যালয় জানিয়েছে, তাদের কাছে ৩১ লাখ টিকা মজুত আছে। এই টিকা ফাইজার কোম্পানির। এর মধ্যে ১৭ লাখের বেশি টিকার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে। গত দুই মাসে এই টিকাগুলো বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর এ বিষয়ে বলেন, ফাইজারের এই টিকা তৈরি করা হয়েছিল করোনার মূল ভাইরাসকে মাথায় রেখে। বাংলাদেশে এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনের ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে কারও কারও সংশয় আছে। এ ব্যাপারে কারিগরি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সেই কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
করোনা অমিক্রন:
বাংলাদেশে করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন এখন ছাড়িয়ে পড়ছে। এই উপধরনটিকে বলা হচ্ছে জেএন-১। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, নতুন এই উপধরনের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম।তবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবরটি এসেছে ঠিক ঈদের সময়। এ সময় বহু মানুষ পশুর হাটে একত্রিত হয়েছেন। ছুটিতে বড় বড় শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার সময় মানুষকে দীর্ঘ সময় বাস-ট্রেন-লঞ্চে ভিড়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ভিড় ছিল প্রচণ্ড। এসবই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে:
বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। মহামারির শুরু থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর ও জনস্বাস্থ্যবিদ মোশতাক হোসেন গত মঙ্গলবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করতে হবে, জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
চট্টগ্রামে আরো একজন কোভিড রোগী শনাক্ত:
চট্টগ্রামে আরো একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নগরীর একটি বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে ২৭ বছর বয়সী ওই পুরুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে তিনজনের শরীরে কোভিড শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
বুধবার পর্যন্ত জেলায় যে চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনই নগরীর বাসিন্দা। অন্যজন মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে থাকেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং দুজন নারী। এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভিড় এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। সিভিল সার্জন জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে কোভিডের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঠিক করা হয়েছে।
বিআলো/তুরাগ