আজ এইউএম ফখরুদ্দিনের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী: স্মৃতির পাতায় একজন কিংবদন্তি সাংবাদিক
✒️”সাংবাদিকতার পথচলা”
“কচি কাঁচার আসর”-এর শুরু থেকে লন্ডনের ডেইলি মিরর পর্যন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও দেশপ্রেমিক এ ইউ এম ফখরুদ্দিনের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। স্মরণে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাসভবনে কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা অংশগ্রহণ করে তার আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করেছেন।
সাংবাদিকতার সূচনা ও প্রভাব
ফখরুদ্দিন ১৯৫৮ সালে “কচি কাঁচার আসর”-এর আহ্বায়ক হিসেবে সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু করেন। তার তৎকালীন কর্মজীবনে দ্য পাকিস্তান অবজারভার এবং দ্য মর্নিং নিউজ-এ অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা পাঠক সমাজে তার নামকরণ ও প্রভাব নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে তিনি দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ডেইলি মিরর-এর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন, যেখানে আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশনায় তার অবদান প্রশংসনীয়।
সাহিত্য ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ফখরুদ্দিন শিক্ষাজীবনেও ছিলেন ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী। তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার আগেই উইলিয়াম শেকসপিয়রের “সনেট”-এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া, খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক জন পিলজার তার বিখ্যাত বই Heroes-এ ফখরুদ্দিনের অবদান নিয়ে প্রায় তিন পৃষ্ঠা উৎসর্গ করেছিলেন। সেখানে তার ছবি সংযুক্ত ছিল এবং সমসাময়িক বিশ্বঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছিল। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে লন্ডনের জনাথন কেপ থেকে এবং পরে ১৯৮৯ সালে প্যান বুকস লিমিটেড, লন্ডন থেকে।
দেশপ্রেম ও সঙ্গীত
ফখরুদ্দিনের রচনা শুধু সাংবাদিকতা ও সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি দেশপ্রেমের প্রকাশক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে তার লেখা গান “ও আমার বাংলা মা, তোর আকুল করা রূপের সুধায় হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে” রেকর্ড করা হয়, যা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই গান তার গভীর দেশপ্রেম এবং সাহিত্যিক দক্ষতার প্রতিফলন।
দীর্ঘদিনের পেশাদার দায়িত্ব
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রতিনিয়ত সমাজ ও দেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে পাঠককে সচেতন ও প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন।

চিরস্মরণীয় বিদায়
প্রবীণ সাংবাদিক এ ইউ এম ফখরুদ্দিন ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার অবদান আজও সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছে। স্মৃতি ও দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক এবং লেখকদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবেন।
বিআলো/তুরাগ



