আজ বিশ্ব চিঠি দিবস
বিআলো ডেস্ক: চিঠি লেখেননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কেউ লিখেছেন পরীক্ষার খাতায় আবার কেউবা লিখেছেন প্রিয় মানুষকে। যদিও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে চিঠি যেন কেবল এক হারিয়ে যাওয়া শব্দ, ইতিহাসের ধুলোমাখা অধ্যায়, এক ভুলে যাওয়া রীতির নাম। অথচ একসময় চিঠি ছিল জীবনভর সংরক্ষণ করার মতো ধন। সাদা কাগজের পাতায় কালি-লেখা অক্ষরই ছিল প্রেম-ভালোবাসার প্রকাশ, বিরহের বেদনা কিংবা পরিবারের খবরের একমাত্র বাহন। ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টা শুনলেই অজান্তে বুক ধড়ফড় করত, চোখ ছুটে যেত দরজার দিকে। হয়তো একটা কাগজের টুকরো এসে বদলে দিত কারও পুরো দিনের মনখারাপ।
দিনটি আজ শুধুই চিঠি লেখার। আজ বিশ্ব চিঠি দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১ সেপ্টেম্বরের এই দিনটিতে উদযাপিত হয় দিবসটি।
দিনটি চিঠির ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগ মাধ্যমকে স্মরণ করার জন্য এবং চিঠি লেখার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উদযাপিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রিচার্ড সিম্পকিন প্রথম এই দিবসের প্রচলন শুরু করেন। ২০১৪ সাল থেকে এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে প্রতিটি দেশে।
এখন অবশ্য হাতে চিঠি লেখার অভ্যাস কারো নেই বললেই চলে। অথচ একটা সময় একটি চিঠি লেখা কিংবা পাওয়ার মধ্যে কত অনুভূতি কাজ করতো সবার।
মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক দ্রুত হলেও আশি কিংবা নব্বই দশকের চিত্রটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন।
ওইসময় যোগাযোগ মাধ্যম এত উন্নত ছিল না। প্রিয়জনের খবর জানতে মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো একটি চিঠির জন্য।
ওই সময় নানা অনুভূতিকে ভাষায় রূপ দিতে মানুষ ব্যাকুল হতো চিঠি লেখাতেই। আবার পাঠানো চিঠির উত্তর পাওয়ার আনন্দেও পেত অসীম সুখ, হতো আত্মহারা।
যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিঠি জনপ্রিয় থাকায় তখন পেন ফ্রেন্ড তৈরির চল ছিল। ব্রিটিশ কলিনস ডিকশোনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী, পেন ফ্রেন্ড বা কলম বন্ধু হলো এমন একজন ব্যক্তি যাকে আপনি বন্ধুত্বপূর্ণ চিঠি লেখেন এবং তার কাছ থেকে চিঠি পান, তবে আপনার দুজনের কখনো দেখা হয়নি। কি জেনে অবাক হচ্ছেন?
বিষয়টি এখনকার যুগের ফেসবুকের মতো। যদিও ফেসবুকে ফ্রেন্ডের ছবি কিংবা ভিডিও দেখার সুযোগ রয়েছে কিন্তু পেন ফ্রেন্ডে সে সুযোগও নেই। শুধু লেখার মাধ্যমে একজন অন্যজন সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে মাত্র।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে চিঠির জায়গা দখল করে নিয়েছে ফেসবুকের ম্যাসেন্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলো। আর হারিয়ে গেছে চিঠি ও চিঠি লেখার সংস্কৃতি।
তাই আসুন, অতীত সংস্কৃতি ধরে রাখতে ব্যস্তময় সময়ে একটু অবসর পেলেই চিঠি লেখার অভ্যাস করি। রুঙিন কোনো খামে প্রিয়জনকে সে চিঠি উপহার দিই। আর উপভোগ করি, অতীত সময়ের জনপ্রিয় এ যোগাযোগের মাধ্যমকে।
বিআলো/শিলি