আপনার ভোট আগে পড়ে গেছে! ‘সান্ত্বনা ভোটে’ ভরসা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোট দিতে গিয়ে হঠাৎ শুনলেন—‘আপনার ভোট হয়ে গেছে’। অথচ আপনি নিজে তো এখনো ব্যালটে সিলই মারেননি! এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি বাংলাদেশের ভোটকেন্দ্রে নতুন কিছু নয়। কেউ ক্ষোভে ফিরে যান, কেউ আবার প্রতিবাদ করেন-যার জেরে ঘটে বিশৃঙ্খলা, এমনকি হতাহতের ঘটনাও।
এ অবস্থার জন্য আইনেই রাখা আছে একটি বিকল্প ব্যবস্থা—‘টেন্ডার্ড ভোট’ বা সান্ত্বনা ভোট। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভাষায়, যদি কোনো ভোটার প্রমাণ করতে পারেন তিনি-ই প্রকৃত ভোটার, তাহলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর ভোট নেবেন। তবে সেই ভোট মূল ব্যালট বাক্সে যাবে না, বরং আলাদা খামে সংরক্ষিত হবে। প্রাথমিক গণনায় এর কোনো মূল্য নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটারকে যেন কেবল ‘সান্ত্বনা’ দেওয়ার জন্যই এই নিয়ম রাখা হয়েছে। তাদের মতে, গণনায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভোটের কোনো বাস্তব মূল্য নেই।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ভোটাররা আসলে প্রতারণার শিকার হন। কমিশন তৎপর না হলে বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে এই ব্যবস্থা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তবে আগে থেকেই এটা ছিল, তাই পরিবর্তন করা হয়নি।”
অন্য এক বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীমের মতে, “প্রকৃত ভোটার যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পান তাঁর ভোট আগে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই ভোটটা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যেহেতু গণনায় ধরা হয় না, এটা এক ধরনের প্রতারণা।”
ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফলে যদি দুই প্রার্থীর ব্যবধান টেন্ডার্ড ভোটের সংখ্যার চেয়ে কম হয়, তখন পরাজিত প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে কেবল তখনই এই ভোট গণনায় ধরা হবে।
তবে বাস্তবে আদালতে যাওয়া কঠিন এবং জটিল হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা প্রায় কেউই তাঁদের ভোটের প্রকৃত মূল্য পান না।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে টেন্ডার্ড ভোটের সুযোগ থাকে না। কিন্তু এবারের সংসদ নির্বাচনে যেহেতু ব্যালট পেপারেই ভোট হবে, তাই সান্ত্বনা ভোটের ব্যবস্থা থাকছে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে-ভোটার কি শুধু সান্ত্বনা চান, নাকি তাঁর ভোটের পূর্ণ মূল্য?
বিআলো/এফএইচএস