আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম:প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিনিধি: ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই সনদ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হলো ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে। এটা হলো গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় অংশ। আমরা পুরোনো কথাবার্তাগুলো পালটে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নিয়ে আসলাম। সংসদ থেকে শুরু করে সরকার পরিচালনা-অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসলাম। এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। আমার সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।’ আজ শুক্রবার বিকাল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এর আগে বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা : ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন তারা। এতে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে সনদ করার আহ্বান : ঐক্যের সুর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই নির্বাচন কীভাবে করা হবে, সেজন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বসে একটি সনদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক সনদ স্বাক্ষরের পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ যে সনদ স্বাক্ষর করা হলো, এটা থেকে বহু দেশ শিখতে আসবে এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে আপনাদের বলে রাখলাম। একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, এরকম বহু উদাহরণ আরো সৃষ্টি করতে পারবেন-সেই পথে যেন আমরা যাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর-যে সুর আমরা আজকে এখানে বাজালাম-সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ঐক্যের সুর, ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজকে ঐকমত্যের মতো আমরা যেমন সনদ করলাম, নির্বাচনের ব্যাপারেও আপনারা রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন কীভাবে নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, যেমন তেমন করে নির্বাচন করলে তো আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া-কিন্তু লাভটা কী হলো?
রাজনৈতিক দলগুলো ও কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ; রাজনৈতিক দলগুলো ও কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, সারা বিশ্বের কাছে এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর তিনি এক ভাষণে এ কথা বলেন। এর আগে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে বলে আগেই জানিয়েছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা ছাড়া তারা এখন জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে না। এই দেশ তরুণদের, তারাই পথ দেখাবে : দেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক মানুষ হলো ২৭ বছরের নিচে। এটাই আমাদের সম্পদ। এই দেশ তরুণদের দেশ, তারাই পথ দেখাবে। সারা দুনিয়া অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কখন আমরা তাদের সাহায্য করব এই তরুণদের পাঠিয়ে। কারণ সারা দুনিয়াতে তরুণদের অভাব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।
তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে তারা কীভাবে এটা করেছিল। আজকে এই দিনটি মহান দিন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটার কথা চিন্তা করলে গা শিহরে ওঠে, এমন একটি দিন। সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় সেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বললো, আমরা কী চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না। যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি বলেন, আমরা পুরোনো কথাবার্তা সব পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নিয়ে আসলাম। আমাদের সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে নিয়ে আসলাম। সরকার চালানোর ভেতরে নিয়ে আসলাম। অনেক বিষয় এসেছে এই পরিবর্তনের ভেতরে। এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের কাছে এসেছে। আমাদের কাছে দরখাস্ত আসছে, আমাদের কাছে এত জন পাঠান। আমাদের কাছে যত পারেন পাঠান। এটা তো ২০২৫ সালের কথা, ২০২৬ সালে কী বলবে? ২০২৭ সালে কী বলবে? হাত জোড় করে করে আসবে। কারণ আমাদের তরুণরা ছাড়া পৃথিবীতে এত তরুণ দিতে পারে, এত তাজা শক্তি দিতে পারে, এত সৃজনশীল মানুষ দিতে পারে, এত বিশ্বস্ত মানুষ দিতে পারে দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, জুলাই সনদের মাধ্যমে আমরা আরেকটি বড় কাজ করলাম, আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন-কানুন ছিল না। মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারতো। এখন আমরা সভ্যতায় আসলাম এবং এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব মানুষ ঈর্ষার চোখে আমাদের দেখবে। কাজেই সেটা সনদ পরবর্তী জীবন আমরা কীভাবে গঠন করব তার ওপর নির্ভর করবে।
জুলাই সনদ বিশ্বে উদাহরণ হয়ে থাকবে : জুলাই জাতীয় সনদ সারা বিশ্বে উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা অভ্যুত্থানের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন। একই সঙ্গে যারা আহত হয়েছেন বা কষ্টে আছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, জাতি আজ এক নবজন্মের সন্ধিক্ষণে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের কারণে, বিশেষ করে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের কারণে। তিনি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটিকে সেই অভ্যুত্থানের “দ্বিতীয় অংশ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের ফলেই আজকের এই দিনটি সম্ভব হয়েছে এবং সারা জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন। আজকে এই দিনটি মহান দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটার কথা চিন্তা করলে গা শিহরে ওঠে, এমন একটি দিন। সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় সেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে-কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বললো, আমরা কী চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না। যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে জাতি পুরোনো ও অপ্রয়োজনীয় আলোচনা বাদ দিয়ে নতুন বিষয়গুলোকে জাতীয় জীবনে নিয়ে এসেছে। এই পরিবর্তনের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের পরিবর্তন এবং সরকার পরিচালনার (সরকার চালানো বিষয়) সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়। তিনি নিশ্চিত করেন, এই পরিবর্তনের ভেতরে অনেক নতুন বিষয় এসেছে।
বিআলো/ইমরান



