আল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.) এর কথা হওয়া পর্বতে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণে মিশর
নিজস্ব প্রতিবেদক: মিশর সরকার সিনাই পর্বতে বিলাসবহুল মেগা-রিসোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য সমানভাবে পবিত্র। এই পাহাড়ে মহান আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন হযরত মুসা (আ.), এবং এখানে অবস্থিত ষষ্ঠ শতকের সেন্ট ক্যাথরিন মঠও আধ্যাত্মিক মর্যাদায় সমৃদ্ধ।
সরকার চালু করেছে ‘গ্রেট ট্রান্সফিগারেশন প্রজেক্ট’, যার আওতায় পাহাড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে হোটেল, ভিলা, শপিংমল, নতুন রাস্তা, বিমানবন্দর এবং ক্যাবল কার। আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার এটি ‘বিশ্বের সব ধর্মের জন্য মিশরের উপহার’ হিসেবে প্রচার করছে।
তবে স্থানীয় বেদুইন জেবেলেয়া উপজাতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বহু প্রজন্ম ধরে তারা ‘গার্ডিয়ান্স অব সেন্ট ক্যাথরিন’ নামে পরিচিত। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের ঘরবাড়ি ও ইকো-ক্যাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, এমনকি কবরস্থান সরিয়ে পার্কিং নির্মাণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ব্রিটিশ ভ্রমণলেখক বেন হফলার বলেছেন, এটি টেকসই উন্নয়ন নয়, বরং বাইরের স্বার্থে চাপিয়ে দেওয়া এক দখল।
প্রকল্প কেন্দ্রিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রিসের সঙ্গে মিশরের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ অভিযোগ করেছে, এক আদালত রায়ে সেন্ট ক্যাথরিন মঠকে রাষ্ট্রীয় জমি ঘোষণা করে মঠের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রিসের আর্চবিশপরা এটিকে আধ্যাত্মিক অস্তিত্বের ওপর হুমকি হিসেবে দেখেছেন।
ইউনেস্কো ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থার মতে, সিনাইয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নির্জনতা মঠের আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের অংশ। সংস্থাটি মিশরকে প্রকল্প বন্ধ করে প্রভাব যাচাই ও সংরক্ষণ পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানিয়েও তা কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচ মঠকে বিপদাপন্ন ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছে। ব্রিটেনের রাজা চার্লসও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই স্থান রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রায় চার হাজার অধিবাসী খোলাখুলি মন্তব্য করতে ভয় পাচ্ছেন। সাংবাদিক মহান্নাদ সাবরি বলেন, “যেভাবে শারম এল-শেখ ও রেড সি রিসোর্ট নির্মাণের সময় বেদুইনদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, একই ঘটনা এখানে ঘটছে।”
মিশর সরকার এই প্রকল্পকে পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবিত করার অর্থনৈতিক ভরসা হিসেবে দেখছে। করোনা পরবর্তী পর্যটন পুনরুদ্ধার ও আঞ্চলিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতের জন্য ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ কোটি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে সমালোচকদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সেন্ট ক্যাথরিন মঠ ও সিনাই পর্বতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য রক্ষা হলেও, পরিবেশ ও বেদুইনদের শতাব্দীপ্রাচীন জীবনধারা চিরতরে বদলে যাবে।
বিআলো/এফএইচএস