ইকসু রোডম্যাপ প্রকাশের দাবিতে ইবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশের দাবিতে এবং ‘সাজিদ’ হত্যার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিসহ ১৫ দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা যায় নানা স্লোগানযুক্ত প্ল্যাকার্ড—যার মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টি কাড়ে, “ইকসু মোদের অধিকার, রুখে দেবার সাধ্য কার” লেখা ব্যানারটি। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী সমস্যা ও প্রশাসনের উদাসীনতার প্রতিবাদে সেখানে অবস্থান নেন।
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম নেতা খন্দকার সাঈম বলেন, “আন্দোলন ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো যৌক্তিক দাবি আদায় করা সম্ভব না। যদি আন্দোলনের প্রয়োজন না-ই থাকত, তাহলে আমাদের ১৫ দফা দাবি জানিয়ে আজও রাস্তায় নামতে হতো না। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষায়, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন সামান্য কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখিয়ে আমাদের হাতে মুলা ঝুলিয়ে দিচ্ছে।”
ইকসু রোডম্যাপ প্রসঙ্গে সাঈম বলেন, “প্রশাসন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গঠনতন্ত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ ১৮ অক্টোবর, এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ইকসু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, এটি করতে আরও সময় লাগবে—যা অত্যন্ত হতাশাজনক।”
সাজিদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের সহপাঠী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০০ দিন পার হয়েছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। সামান্য তথ্য জানার জন্যও আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নই। যদি কেউ পেছন থেকে আপনাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে বাধা দেয়, তাহলে তাদের পরিচয় প্রকাশ করুন। আমরা তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করবো।”
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ত্বকী ওয়াসিফ বলেন, “গঠনতন্ত্র প্রকাশের জন্য ১৫ অক্টোবরের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল, কিন্তু এখন ১৮ অক্টোবরেও তা প্রকাশ হয়নি। বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে ইকসু নির্বাচনকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ভুলে যাবে—এ ধারণা ভুল। আমরা এখান থেকে প্রশাসনকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। সময়মতো রোডম্যাপ না দিলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “জুলাইয়ের একটি উক্তি মনে করিয়ে দিতে চাই—‘আসছে ফাগুন, আমরা দিগুন হবো।’”
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়নের জন্য প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যদি প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ আরও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে পরবর্তী ধাপে যাবে।”
শিক্ষার্থীদের এই অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা ইকসুর রোডম্যাপ দ্রুত প্রকাশ এবং প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
বিআলো/তুরাগ



