ইটভাটা শিল্পে টিকে থাকার লড়াইয়ে মালিকদের ছয় দফা দাবি
‘বৈধ ভাটায় অভিযান কেন?’—মালিকদের প্রশ্ন? “জিগজ্যাগ ভাটাও হয়রানির শিকার—টিকে থাকতে চাই নীতিগত সহায়তা”
হৃদয় খান: দেশজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে সড়ক–মহাসড়ক উন্নয়ন—সব ক্ষেত্রেই মাটির নিচে নীরবে কাজ করে গেছে ইটভাটা শিল্প। চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশের উন্নয়নযাত্রার এক নিরবচ্ছিন্ন সহযাত্রী হলেও সাম্প্রতিক বিধিনিষেধ, অনিশ্চয়তা ও হয়রানির অভিযোগে এই খাত এখন টিকে থাকার সংকটে। পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ প্রযুক্তি ব্যবহার করেও বৈধ ভাটাগুলো জরিমানা ও ভাংচুরের মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মালিকরা।
বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক ইটভাটায় কাজ করে, আর তাদের পরিবারসহ প্রায় ২ কোটি মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি প্রতিটি ভাটার বিপরীতে থাকা ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বিবেচনা করলে পুরো খাত জুড়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঝুঁকিতে আছে বলে দাবি মালিকদের।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছে—
১. লাইসেন্সের দূরত্ব কমানো
২০১৩ ও ২০১৯ সালের আইন অনুসারে অনেক জিগজ্যাগ ভাটা শুধুমাত্র দূরত্বজনিত কারণে লাইসেন্স পাচ্ছে না। মালিকদের প্রস্তাব—
নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটার থেকে কমিয়ে ৪০০ মিটার করা
বনাঞ্চলের দূরত্ব ৭০০ মিটার নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি
২. জিগজ্যাগ ভাটায় হয়রানি ও মোবাইল কোর্ট বন্ধ
বৈধভাবে পরিচালিত জিগজ্যাগ ভাটায় জরিমানা, ভাংচুর বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বন্ধের দাবি।
৩. ভাটা বন্ধ করতে হলে ক্ষতিপূরণ
সরকার যদি কোনো ভাটা বন্ধ করতে চায়, তবে মালিকদের যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি।
৪. লাইসেন্স নবায়নে সমিতির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক
ডিসি লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ধরনের নবায়নেই জাতীয় সমিতির প্রত্যয়ন অপরিহার্য করার প্রস্তাব।
৫. ইটভাটাকে “শিল্প” হিসেবে ঘোষণা
ইটভাটার গুরুত্ব বিবেচনায় এই খাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্প ঘোষণা করার দাবি মালিকদের।
৬. দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন
ইটভাটা পরিচালনায় স্থায়ী, পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান।
বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান বলেন, “সরকারের নির্দেশনা মেনে পরিবেশবান্ধব ভাটা স্থাপন করেছি। তারপরও যদি হয়রানি বন্ধ না হয়, তবে এই খাত ধ্বংসের মুখে পড়বে।” তিনি দ্রুত ছয় দফা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিআলো/তুরাগ



