• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় শিশু সাজিদের মৃত্যু, মামলার তদন্ত পেল পিবিআই 

     dailybangla 
    08th Mar 2024 3:28 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    ইবনে ফরহাদ তুরাগ: রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলা ও অদক্ষ নার্সের উদাসীনতায় ব্লাড স্যাম্পেল নিতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দেড় মাসের শিশু সাজিদের মৃত্যুর অভিযোগ গড়ালো আদালতে। মামলাটির তদন্ত গেলো পিবিআই।

    ঘটনার পর থেকে অসাবধানে ব্লাড নেওয়া আসমা নামে সেই নার্স পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি আড়াল করতে শিশুর ডাক্তারি ফাইলপত্র কৌশলে সরিয়ে ফেলা, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না রাখা ও ব্লাড স্যাম্পেল ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) রাত ৮টায় দেড় মাসের শিশু সাজিদকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ইসলামিয়া হাসপাতালে আসেন মেরাজনগরে বসবাসকারী মা নিপা আক্তার ও বাবা সেন্টু। এ সময় শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রুহুল আমিন তার নিজ চেম্বারে শিশুটিকে দেখার পর ২টি ব্লাড টেষ্ট ও আলট্রাসনোগ্রাফি করতে ব্যবস্থাপত্র দেন ও তাদের নার্সকে নির্দেশনা প্রদান করেন। হাসপাতালের অদক্ষ নার্স (আসমা) এ সময় মায়ের কোলে থাকা শিশুটিকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি সম্পন্ন করে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কক্ষে যায় ও পর্দা টেনে দেয়। অতঃপর বাচ্চার হাতে রণ খুঁজে না পেলে তার হাতে একাধিকবার ইনজেকশন পুশ করতে থাকে।

    এই অবস্থায় পর্দার ওপাশ থেকে বাচ্চার চিৎকারে বাচ্চার বাবা পর্দা সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং দেখে সেই নার্স ব্যচ্চার হাতের নার্ভ খুঁজে পাচ্ছে না বলে বারবার মোটা একটা সুই প্রবেশের চেষ্টা করছে। সে কারণে তখন বাচ্চার হাত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে সেই নার্স অসাবধানে বাচ্চার ডান হাত থেকে বড় বড় দুই টিউব রক্ত দ্বারা পরিপূর্ণ করে ও ক্ষত স্থানে সামান্য তুলার সাহায্যে রক্ত বন্ধ করে দেয়।

    তখন বাচ্চায় মা বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে নার্সকে জিজ্ঞাসা করে এক সিরিজ রক্ত কি এই পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিলো না? উত্তরে কর্তব্যরত নার্স তাকে ধমক দিয়ে বলে ‘আপনি আমার চেয়ে বেশি বোঝেন? তারপর নার্স বাচ্চার হাতে একটি তুলা গুঁজে দিয়ে বাচ্চার মায়ের কোলে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেয়। তখন বাচ্চা প্রচুর কান্না করছিলো এবং হাতে লাগানো তুলা রক্তে ভিজে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় বাচ্চার মা বিষয়টি নার্সকে জানালে নার্স বলে কিছুক্ষণ পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে আপনি তুলা ফেলে দিবেন।

    তখন রাত ৯টা। এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাচ্চার পরিবারকে শান্তনা দিয়ে বাচ্চাটিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। বাসায় যাওয়ার পর হয় অবস্থার অবনতি। শুরু হয় বাচ্চার ব্লাড নেয়া স্থান থেকে আরো রক্তপাত। এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ব্লাড বন্ধ করতে পারছিলো না বাচ্চাটির পরিবার। শিশু সাজিদকে নিয়ে বাসায় আসার পরেও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় বাচ্চার বাবা আতঙ্কিত হয়ে যায়।

    তখন রাত ১২টা। এবার বক্তপড়া বন্ধ করতে আবার নিয়ে আসা হয় ইসলামিয়া হাসপাতালে, কিন্তু এসে দেখে হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নেই, আছে নার্স। বাচ্চাটির মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বারও সঠিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। এদিকে বাচ্চার শরীর থেকে রক্ত পড়া ৩ ঘণ্টা অতিক্রম হয়ে গেছে। এ সময় হাসপাতালের দ্বিতীয় ভবনে শিশুটিকে নিয়ে গেলে সেখানে ইমার্জেন্সিতে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তার বাচ্চার হাতের নির্দিষ্ট জায়গায় তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলে এবং সকালে আবার বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেয়।

    এরপর বাচ্চার বাবা বাচ্চাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। পরবর্তীতে বাচ্চার পরিবার খেয়াল করে সারারাত রক্ত ক্ষরণের ফলে বাচ্চার ব্যান্ডেল ভিজে গেছে ও প্যাঁচানো তোয়ালেও রক্তে ভিজে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উপায় না পেয়ে খুব সকালে মুমুর্ষু শিশুটিকে নিয়ে আবার ইসলামিয়া হাসপাতালে গেলে কাউকে না পাওয়ায় কর্তব্যরত ডিউটি ডাক্তার তাদের বিরূপ বরূপ পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে কৌশলে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করে। তাৎক্ষণিক শিশুটির পরিবার মুমূর্ষু শিশুটিকে বাঁচাতে ঢাকা মেডিক্যাল ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়।

    অতঃপর ঢাকা মেডিক্যালের কর্তব্যরত ডাক্তার শিশু বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে বাচ্চার বাবাকে জানায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে রক্তস্বল্পতা হওয়ায় বাচ্চাকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু বাচ্চার শরীরে রক্ত না থাকায় সেখানে গ্রুপিং করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় বাচ্চার বাবা ও মামা দ্রুত ইসলামিয়া হাসপাতলে আসে এবং বিগত দিনে তাদের দ্বারা সংগ্রহ করা ব্লাড স্যাম্পেল থেকে রক্তের গ্রুপিং করে দিতে বলে। কর্তৃপক্ষ বাচ্চার বাবাকে রিসিট কাটতে কাউন্টারে পাঠায় এবং হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার কাউন্টারে অবস্থিত হাসপাতাল ইনচার্জ বাসীর নিকট থেকে বাচ্চার চিকিৎসাপত্র ও আনুসাঙ্গিক কাগজপত্রের ফাইলটি প্রয়োজনে চেয়ে নেয়। ব্যাচ্চার বাবা রিপোর্টের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে থাকে।

    পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ব্লাড স্যাম্পেল ফেলে দিয়েছে। এর ঠিক ১ ঘণ্টা পর ঢাকা ম্যাডিকেলের ডাক্তার শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন এবং কজ অফ ডেইথে (cause of death) সেখানে মৃতের কারণ হিসেবে ৬ ঘণ্টা রক্তক্ষরণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে দেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে ১.৩০ মিনিটে বাচ্চার বাবাকে তাহার স্ত্রী ফোন করে জানায় আমাদের সন্তান আর পৃথিবীতে নাই। সেই অবস্থায় বাচ্চার বাবা হতভম্ব হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চলে যায়। সেখান থেকে সন্তানের নাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায়।

    নিহত শিশু সাজিদের বাবা জানান, আমি যখন বাচ্চাকে বাঁচাতে ব্লাড গ্রুপ মেলানোর জন্য ব্লাড স্যাম্পেল চাই তখন তারা আমাকে বলে ব্লাড স্যাম্পল ফেলে দিসি, পুনরায় যখন আমি সেখানে আমার ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাই, তখন তারা বলে, যদি আর কখনো এই বিষয় নিয়ে হাসপাতালে আসি তাহলে আমাকে দেখে নিবে এমনকি প্রাণে মেরে ফেলবে।

    ইসলামিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করে হাসপাতালের ইনচার্জ আজিজুল হক সরদার বলেন, আমরা কোনো চিকিৎসা করিনি, চিকিৎসা করার জন্য ব্লাড স্যাম্পেল নিয়েছি, তখন বাজে রাত ৮:৩০। বাচ্চাটির পরিবার যখন ব্রিডিং-এর কারণে রাতে ১২:৩০-এর দিকে আবার আসে তখন আমরা শিশুটিকে ব্যন্ডেজ করে দিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করি। তারা তখন রাতে ঢাকা মেডিক্যালে না গিয়ে ভোরে আবার বাচ্চাটিকে নিয়ে আসেন।

    তখন আমাদের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বলে, আপনি রাতে ঢাকা মেডিক্যালে যাননি কেনো? এক্ষুনি তাড়াতাড়ি মেডিক্যালে যান। এরপর সকালে তারা আবার যখন ঢাকা মেডিক্যালের পরামর্শে ব্লাড স্যাম্পেল নিতে আসে, তখন আমরা তাদের অপেক্ষা করতে বলি, এ সময় ঢাকা মেডিক্যাল থেকে তার সজনদের মাধ্যমে মৃত্যু সংবাদ এলে বাচ্চার পরিবারের লোকজন স্যাম্পেল না নিয়ে চলে যান।

    ব্লাড স্যাম্পেল গ্রহণ করা নার্স আসমা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে নার্স না, সে একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। আসমার অভিজ্ঞতা ৭বছর। তিনি (আসমা) কোয়ান্টামে সাবেক কর্মরত ছিলেন। এ সময় আসমার সাথে কথা বলতে চাইলে, আসমা পলাতক কী না জানতে চাইলে এবং আসমার প্যাথোলোজি ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে, হাসপাতাল ইনচার্জ কৌশলে তা এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ড. রুহুল আমিন-এর সাথে কথা বলতে হাসপাতালে এলে জানা যায় উনি ছুটিতে আছেন। মুঠোফোনে তার ভিজিটিং কার্ডের নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে, ডাক্তারের ব্যক্তিগত নাম্বার দেওয়া যাবে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

    এই ঘটনায় ইসলামিয়া হাসপাতাল বাংলাদেশ, কদমতলী শাখার কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং- ৪. তারিখঃ ২৯/০২/২৪। ধারা- দন্ডবিধির ৩০৪ (এ)/৫০৬/৩৪।

    বিআলো/নিউজ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031