ঈদের ছুটির ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনা; প্রাণ ঝরেছে ৩৯০
বিশেষ প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আজহার ১০দিনে সারাদেশে ৩৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ৩৯০ এবং ১ হাজার ১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৫ এবং ১২ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ১২ এবং নিখোঁজ রয়েছে ৬ জন। সবমিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৪১৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪২৭ এবং ১ হাজার ১৯৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০ এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ১৮২ জন। গত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ নিহত এবং আহত হয়েছিল ৭৬২ জন। বিগত ঈদুল আজহার সঙ্গে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২.৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.০৭ এবং ৫৫.১১ শতাংশ আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ০৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ০৫ জন শিক্ষক, ০১ জন চিকিৎসক, ০১ জন প্রকৌশলী, ০৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬.৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮.৫৮ শতাংশ বাস, ১৩.৬২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭.৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭.৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭.০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
দুর্ঘটনার ২৮.২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০.৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০.০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ০.৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০.২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭.২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
এ সময় সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিআলো/তুরাগ