উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনা: আমি ছিলাম মৃত্যুপুরীর সামনে
২১ জুলাই ২০২৫—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নির্মম কালো দিন।
মৃত্যুর সংখ্যা ১২০+ (দাবি প্রতক্ষ্যদর্শীর)
প্রত্যক্ষদর্শীর কলমে
স্থান: দিয়াবাড়ি, উত্তরা
তারিখ: ২১ জুলাই ২০২৫
আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি—সেই সকালটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। বিমান দুর্ঘটনার পর ছুটে গিয়েছিলাম উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে পৌঁছেই মনে হলো—আমি যেন এক মৃত্যুপুরীতে পা রেখেছি।
ভবনটি ছিল দুই তলা।
প্রথম তলায় ছিল ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা,
দ্বিতীয় তলায় ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা।
আমি কোন ক্লাসরুমে ঢুকিনি যেন এক উত্তপ্ত কয়লার বাগারে ঢুকেছিলাম… ক্লাসের ঢুকার রাস্তায় বিমানের ধংসাবশেষ পড়ে বন্ধ… জানালা একটি— ভিতরে ৩০+ শিক্ষার্থী বেঞ্চে বসে…দেহ অর্ধ গলিত অবস্থায়…কেউ হাত নাড়ায় আর কেউ মাথা… এক সেনা সদস্য বাহিরে দিয়ে গ্রিল ভাঙ্গবার কথা বলা মাত্র ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন মিলে গ্রিল ভাঙ্গা শুরু করি…. কয়েকজনের হাত জানালার গ্রিলে ছিল (কারণ তারা বের হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে ছিল) কিন্তু আগুনের উত্তপ্তার কাছে জীবন দিতে হল তাদের…
জানালার গ্রিল ভাঙ্গবার সময় পাশে থাকার ২ জন সেনাসদস্য কাদঁছিল আর বলছিল, “এইযে মা !!! এইযে মা হয়ে গেসে আরেকটু এরপরই বের হতে পারবা ” বলে বলে অজস্র কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখছি… হাত কাপছিল বাচ্চাগুলার মুখ দেখা মাত্র… বালতি দিয়ে নিচ থেকে পানি আনতে গেলে উপরে শব্দ পাই গ্রিল ভাঙ্গসে… ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক এক করে ঢুকে গেল আমাদের মাক্স ছিল না তাই মানা করসে আমরাও মানা শুনে ঢুকার সাহস করিনি… মাথা ঝিম খাওয়া ছিল, হাত কাপছিল আর হার্টবিট প্রচুর ফাস্ট হয়েগিয়েছিল… শুধু দেখলাম ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বাচ্চা গুলোর হাত ধরে তুলতে গিয়ে হাত সাথে এসে পরতেসে আহহহহহহহহ…. নিজেকে ঐ সময় কিভাবে ঠিক রাখতে পেরেছিলাম তাই ভাবছি…
এমন ভয়াবহতার মাঝেও কিছু অমানবিক চিত্র দেখেছি—দুই একজন ভিডিও করছিল আহত শিক্ষার্থীদের, “আল্লাহ”, “ইসস!” বলে আহাজারি করছিল, কিন্তু কাউকে সাহায্য করছিল না। এসব দেখে সেনা সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন, এবং কিছু জায়গায় উত্তেজনা তৈরি হয়। সত্যি বলতে, এদের বিরুদ্ধে যা হয়েছে—যথার্থ হয়েছে।
সমাজের কিছু শু’য়ো’রের বাচ্চার সাথেও দেখা হইসে যারা আহত কিন্তু সুস্থ অবস্থায় হেটে হেটে প্রথম ধাপে বের হইসে তাদের ভিডিও করছিল আর “আল্লাহ” “ইসসস” “আল্লাহ” করছিল… মূলত এদের সাথে সেনা সদস্যদের হাতাহাতিই দেখতে পেরেছেন হয়তো… এদের এইসব কর্মকান্ডের জন্য আর সারাক্ষণ বিভিন্ন পয়েন্টে মারামারি দেখতে পাইসি এবং আমার মতে উচিত হয়েছে….
হে আল্লাহ!
আজ যারা এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছে, তারা সবাই শিশু, নিষ্পাপ, ভবিষ্যতের স্বপ্নবাহী। তুমি তাদের জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকামে স্থান দাও। বাংলাদেশ যেন আর কখনও এমন শোকাবহ দিন না দেখে। আর যারা এই জাতির অগ্রযাত্রার পথে বাধা—তাদের তুমি ধ্বংস করো। আমিন।
বিআলো/তুরাগ