এইচএসসি ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় ভয়াবহ বিপর্যয়
চঞ্চল দাশগুপ্ত,কক্সবাজার: ২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে।বিগত ১২ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন।প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এবার ফেল করেছে। পাশাপাশি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘোষণা হওয়া ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় পাসের হার মাত্র ৪৫.৩৯%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২০৬ জন। এদর মধ্যে ছেলে ৬৭ জন এবং মহিলা ১৩৯ জন।
২০২৪ সালে ছয়টি বিষয়ের এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৬৩.১৯%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৯৮ জন।২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭০.৩৮%। ২০২২ সালে পাশের হার ছিল ৭৪.৯২%। ২০২১ সালে পাশের হার ৮৬.৮৮ %। ২০২০ সালে করোনার কারণে সবাই অটো পাশ। ২০১৯ সালে পাসের হার ৫৪.৩৯%। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬১.৬৬ %। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৫৫.৩২%। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৪.৮০%।
২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। যেটিকে ‘অটোপাস’ বলা হয়ে থাকে। ফলাফল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিগত বছরের এসএসসির ফল বিবেচনা নেওয়া হয়। আর ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কিছু নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল, যার ফলে পাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী,চলতি বছর কক্সবাজার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১২ হাজার ৮৪৩ জন। যেখানে ১২ হাজার ৬৯৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যার মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ১৬২ জন আর মেয়ে ৭ হাজার ৫৩৬ জন।
মোট পাসকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৩ জন। যার মধ্যে ছেলে ২ হাজার ১৮৭ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৫৭৬ জন।পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছেলেরা। ছেলে পরীর্ক্ষীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪২.৩৭% জন আর মেয়েদের পাসের হার ৪৭.৪৫%।মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০৬ জন যার মধ্যে ছেলে ৬৭ এবং মেয়ে ১৩৯ জন।
এবারের ফলাফল অনুযায়ী পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছেন ৩৯.০১% পরীক্ষার্থী। আর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৫৩.৮৮% এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪৯.৫৬%।
এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে মেয়েরা। এবছর পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে দুটোতেই ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা। ২০৬ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছেন ৯০ জন, মানবিক বিভাগে ৬৩ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫৩ জন শিক্ষার্থী।
মানবিক বিভাগ থেকে এবছর ৮ হাজার ১৪৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮ হাজার ৪৬ জন। যেখানে পাস করেছে ৩ হাজার ১৩৯ জন। পাশের হার ৩৯.০১%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩ জন। এর মধ্যে ছেলে ৭ জন এবং মেয়ে ৫৬ জন।এবছর মানবিকে ৩ হাজার ১০৬ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ হাজার ৭২ জন। যেখানে পাশ করেছে মাত্র ১ হাজার ৯০ জন। পাশের হার ৩৫.৪৮%।জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭ জন। আর ৫ হাজার ৩৮ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ হাজার ৯৭৪ জন। যেখানে পাশ করেছে ২ হাজার ৪৮ জন। পাশের হার ৪১.১৯%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৬জন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবছর ২ হাজার ৯৫৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ হাজার ৯২২ জন। যেখানে পাস করেছে ১ হাজার ৪৪৮ জন। পাশের হার ৪৯.৫৬%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ জন। এর মধ্যে ছেলে ২৫ জন এবং মেয়ে ২৮ জন।এবছর ব্যবসায় শিক্ষায় ১ হাজার ৪৪৫ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৪২৮ জন। যেখানে পাশ করেছে মাত্র ৬৪৩ জন। পাশের হার ৪৫.০৩%।জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ জন। আর ১ হাজার ৫০৯ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৪৯৪ জন। যেখানে পাশ করেছে ৮০৫ জন। পাশের হার ৫৩.৮৮%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ জন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবছর ১ হাজার ৭৪৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৭৩০ জন। যেখানে পাস করেছে ১ হাজার ১৭৬ জন। পাশের হার ৬৭.৯৮%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯০ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩৫ জন এবং মেয়ে ৫০ জন।এবছর বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬৯ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৬২ জন। যেখানে পাশ করেছে ৪৫৪ জন। পাশের হার ৬৮.৫৮%।জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ জন। আর ১ হাজার ৭৬ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৬৮ জন। যেখানে পাশ করেছে ৭২২ জন। পাশের হার ৬৭.৬০%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫০ জন।
ফলাফল ধসের কারণ হিসেবে কারণ হিসেবে কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ ফলের কারণে সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হয়েছে।
বিআলো/শিলি