• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    এক সময়ের ন্যাড়া পাহাড় এখন সবুজে ভরপুর 

     dailybangla 
    27th Aug 2025 10:10 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    এম এ মান্নান, কক্সবাজার থেকে ফিরে: কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের এক সময়ের ন্যাড়া পাহাড় এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। বাগানে শীলকড়ই, আমলকি, বহেড়া, হরিতকি, চিকরাশি, ওলটকম্বল, অর্জুন, কাঞ্জলভাদি, জারুল, বকাইন, পিতরাজ, সোনালু, তেতুল, রক্তচন্দন, জলপাই, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়েছে। বাগানগুলো পরিচর্যার ফলে রোপিত চারাগুলো অত্যন্ত সতেজ ও সাবলীলভাবে বেড়ে উঠছে। মেহেরঘোনা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল হোসেন জানান এই রেঞ্জে শতাধিক বছরের পুরোনো যা বাংলাদেশে দুর্লভ কাটা বাশ রয়েছে। এছাড়াও গর্জন, দেশীয় প্রজাতীর সিভিট গাছ, কাজু বাদাম গাছ, লিচু গাছ ও কাঠ জাতীয় গামার গাছ রয়েছে।

    রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ আর্থিক সনে সৃজিত ৮৭২ হেক্টর বাগানের আংশিক ঘুরে দেখা যায় সুফল প্রকল্পের আওতায় বাগান সৃজনে যেমন এক সময়ের ন্যাড়া পাহাড় সবুজে ভরে উঠছে তেমনি স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যপক কর্মস্থান হয়েছে বলে জানান জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম কবির উদ্দিন। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, ইটপাথরের দালানে কোথাও নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নেই। প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাই যত বেশি বনায়ন হবে, তত বেশি পৃথিবীটা বাসযোগ্য হবে।

    দক্ষিণ বন বিভাগ : টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগে ২০১৯-২০ আর্থিক সাল থেকে ২০২৩-২৪ আর্থিক সাল পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৬৬৮ হেক্টর স্বল্প মেয়াদি, দীর্ঘ মেয়াদি, পশুখাদ্যের বাগানসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির বনায়ন করা হয়েছে। উক্ত বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জাধীন থাইংখালী বিটে ২০২০-২১ আর্থিক সনে সৃজিত ২২০.০ হেক্টর স্বল্প মেয়াদি দেশিয় প্রজাতির বাগান সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে উল্লেখিত বাগানে বহেরা, কদম, শিমুল, চিকরাশি, হরিতকি, নিম, বকাইন, অর্জুন, ছাতিয়ান, জারুল, রাজ কড়ই, শীল কড়ই, আমলকি, গামার, কাঠবাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় সৃজিত চারার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাগানে জীবিত চারার সংখ্যা প্রায় ৯৭-৯৮% ও চারার গড় বৃদ্ধি ১৪-১৬ ফুট বলে প্রতিয়মান হয়েছে।

    সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে বাগান সৃজনের ফলে মূল্যবান বন্যহাতি, মায়া হরিণ, সরিসৃপ, পাখিসহ অন্য প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের যোগান নিশ্চিত হয়েছে। এর ফলে সৃজিত বাগান এলাকার পাহাড়ে প্রায় প্রতিদিনই হাতির বিচরণ দেখা যায়। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে বাগান সৃজনের ফলে একদিকে ন্যাড়া বা অবক্ষয়িত বনভূমিতে বিপন্ন বা বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতি পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে। অপরদিকে বনভূমি বেহাত হওয়ার থেকে রক্ষা পেয়েছে। যা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কক্সবাজারে ন্যাড়া পাহাড় ও দখলমুক্ত জমিতে সবুজায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গার বসতির কারণে গাছের ক্ষতি হয়েছে এবং যেইসব এলাকায় পাহাড় ন্যাড়া রয়েছে ওই জায়গাতে গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে।

    দক্ষিণ বনবিভাগের ১০টি রেঞ্জে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। ভারি বর্ষণের কারণে চারা রোপণে ব্যাঘাত ঘটে কিছুটা। কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ন্যাড়া পাহাড় ও দখলমুক্ত জমিতে হরীতকী, আমলকী, গয়রা, গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, বৈলাম, সিভিট, জাম, চাপাতুল, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন জাতের চারা গাছ লাগানো হয়।
    পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিরান ভূমিতে সবুজায়নে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বড় অবদান রাখবে। বুনো হাতিরা নতুন করে আশ্রয়স্থল (অভয়ারণ্য) ফিরে পাবে। উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলে বনায়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশির দশকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব দিকে তাকালে বড় বড় গাছে ঠাসা জঙ্গল চোখে পড়ত। সেসময় এখানে শিয়াল, বানর, হনুমান, হরিণ, বন মোরগ, হাতি, চিতা ও মেছো বাঘসহ নানা বন্য প্রাণী বিচরণ করতো। অনেক সময় এসব প্রাণী পাহাড়ের নিকটবর্তী লোকালয়ে এসে পড়ত। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে হঠাৎ নির্বিচারে হত্যা করা হয় দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিশালাকার এ বৃক্ষরাজি।

    অল্প সময়ে পাহাড় থেকে পাহাড় বৃক্ষ উজাড় হয়ে পরিণত হলো ন্যাড়া ভূমিতে। আবাস স্থল হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেল নানা বন্যপ্রাণী। এরপর দখল যজ্ঞ চলতে শুরু করলো পাহাড় ভূমিতে। নানা প্রতিবন্ধকতায়ও থামানো যায়নি পাহাড় দখল ও কর্তন। এখন বোধ জেগেছে শান্তিতে বাঁচতে হলে দরকার সবুজের ছায়া। তাই বন বিভাগের সঙ্গে এতাত্ম হয়ে পাহারা বসানো হচ্ছে গাছ বাঁচাতে। ফলে ন্যাড়া পাহাড়ে আবারো হাতছানি দিচ্ছে সবুজের সমারোহ বৃক্ষরাজি। বন বিভাগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় তার মতো পাহাড়ের সান্নিধ্যে বসবাসকারী সব বয়সের মানুষের মাঝে খুশির আমেজ বিরাজ করছে। কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের সহায়তায় হাজার হাজার একর বন ভূমিতে গড়ে উঠেছে নীরব সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস বনভুমিকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। যতদুর চোখ যায় সবুজের সমারোহে ভরে গেছে সৃজিত সামাজিক বনায়ন।

    দৃষ্টিনন্দন বনায়ন এখন পর্যটক-দর্শণার্থীদের কাছে বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে সড়কের উভয় পাশের সবুজ বনায়নে কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতির অপার স্বাদ ও ছবি ধারণ করে নিচ্ছেন নিয়মিত। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি, ফাসিয়াখালী, রাজঘাট, ঈদগাঁও, ঈদগড়, মেহেরঘোনা, বাঁকখালী, জোয়ারিয়ানালা ও সদর রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে সুফল প্রকল্পের অধীনে বন নির্ভরশীলদের বননির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প জীবিকায়নের কাজ করছে বেশ কয়েকটি এনজিও। সামাজিক বনায়ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সহায়তা দিচ্ছে স্বনির্ভর হতে। বন বিভাগ অংশীদারদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে। বন ও বনভূমি রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বনকর্মীদের পাশাপাশি অংশীদাররাও। সৃজিত বনায়নগুলো দিনদিন বেড়ে উঠছে। আর যেসব বনায়ন পরিপূর্ণতা পেয়েছে তা কেটে নতুন বনায়ন করা হচ্ছে। এতে করে দেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, স্থানীয় জনগণও উপকৃত হচ্ছে। সরকারও আয় করছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। সামাজিক বনায়নের ফলে অংশীদার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্থ গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে।

    বিআলো/ইমরান

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031