এতিম শিশুদের প্রতি মহানবির (সা.) সীমাহীন মমতা
নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবতার শিক্ষক, অসহায়দের আশ্রয়স্থল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিশুদের প্রতি অসাধারণ স্নেহ দেখাতেন। তিনি সব শিশুকেই নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন, কোলে নিতেন, স্নেহভরে চুমু দিতেন, গল্প করতেন। বিশেষ করে অনাথ ও এতিম শিশুদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অন্য মাত্রার। কারণ তিনি নিজেও ছিলেন এতিম।
পিতার মৃত্যু হয় তার জন্মের আগে, আর মাত্র ছয় বছর বয়সে হারান মাকেও। অল্প বয়সেই তিনি আশ্রয় নেন দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে, কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তাকেও হারান। পরে তিনি চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে বড় হন। তাই তিনি নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানতেন এতিমের কষ্ট কেমন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ কি আপনাকে এতিম অবস্থায় পাননি, অতঃপর তিনি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন? (সুরা দুহা: ৬)
নবিজি (সা.) জীবনের প্রতিটি ধাপে কষ্ট সহ্য করে বড় হয়েছেন। এই বাস্তব অভিজ্ঞতাই তাঁকে করে তুলেছিল এতিম ও অসহায় মানুষের প্রতি সীমাহীন দয়ালু। তিনি সারাটি জীবন সমাজে এতিম-অনাথদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, এতিমদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম। তারা তোমাদেরই ভাই।” (সুরা বাকারা: ২২০) আবার সতর্ক করে দিয়েছেন—“যে ব্যক্তি এতিমের অর্থ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, সে তার পেটকে আগুনে পূর্ণ করে; সে জাহান্নামে যাবে। (সুরা নিসা: ৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীতে এসেছে, তুমি যদি হৃদয় কোমল করতে চাও তবে এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকিনকে খাওয়াও। (আল-মু’জামুল কাবির: ২৮৭১) তিনি এতিম শিশুদের নিজের পরিবারের অংশ মনে করতেন—তাদের শিক্ষা দিতেন, খাওয়াতেন, স্নেহ করতেন।
হাদিসে এতিম প্রতিপালনের মর্যাদা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব।” (তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল পাশাপাশি রাখেন) (সহিহ বুখারি: ৫৩০৪)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো; কিংবা সে এমন নামাজি যে কখনো ক্লান্ত হয় না, কিংবা এমন রোজাদার যে কখনো ইফতার করে না। (সহিহ মুসলিম: ৫২৯৫)
এমনকি তিনি ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি এতিমকে নিজের পরিবারের সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ায় এবং তার ক্ষুধা মেটায়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ: ১৮২৫২)
বস্তুত এতিম হওয়া এক বিশেষ পরীক্ষা, আর এতিমদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশ করা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম পথ। ইসলাম শিখিয়েছে, এতিম হলো আমাদের সন্তানের মতো—তাদের ভালোবাসা, সুরক্ষা ও শিক্ষার দায়িত্ব সমাজের প্রতিটি মানুষের ওপর বর্তায়।
বিআলো/এফএইচএস