ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–মধ্য এশিয়া শীর্ষ বৈঠক আজ: রাশিয়া–চীন প্রভাবের পাল্টা ভারসাম্য খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে একাধিক শীর্ষ বৈঠকের পর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটনে মুখোমুখি হচ্ছেন মধ্য এশিয়ার পাঁচ দেশের নেতাদের সঙ্গে। বৃহস্পতিবারের এই বৈঠককে কূটনৈতিক মহল দেখছে নতুন ভূ–রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব প্রশ্নবিদ্ধ। একই সময়ে চীন তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করেছে। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, এখন এই দুই পরাশক্তির প্রভাববলয়ে ভারসাম্য আনতেই সক্রিয় হচ্ছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন হওয়া পাঁচ দেশ—কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান—সম্প্রতি “সি৫+১” ফরম্যাটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে।
বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মধ্য এশিয়া এখন শক্তিধর দেশগুলোর নজরে। কাজাখস্তান বিশ্বের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদক, উজবেকিস্তান সোনার ভাণ্ডার, তুর্কমেনিস্তান গ্যাসে সমৃদ্ধ, আর কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান নতুন খনিজ সম্পদ উন্মোচনের পথে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বিরল মৃত্তিকার বিকল্প উৎস হিসেবে এই অঞ্চলকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
চীনের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করা তিন দেশ—কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান—ইতোমধ্যে বেইজিংয়ের অবকাঠামোগত বিনিয়োগে যুক্ত। অন্যদিকে রাশিয়া এখনও সোভিয়েত আমলের জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে তার প্রভাব ধরে রেখেছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কও সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে অঞ্চলে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
আলমাটিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এরকিন ইসমাইলভ বলেন, ওয়াশিংটন এখন মধ্য এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। রাশিয়া ও চীনের প্রভাব কমাতে ট্রাম্প প্রশাসনের এই বৈঠক এক কৌশলগত পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, সি৫+১ কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু অর্থনৈতিক অংশীদার নয়, বরং নিরাপত্তা ও জ্বালানি সহযোগিতার কেন্দ্রেও রূপ দিতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম দূষিত অঞ্চল হিসেবে মধ্য এশিয়া এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। পাঁচটি দেশই পানির ঘাটতিতে ভুগছে। বৈঠকে পানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই জ্বালানি ও পরিবেশ–সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাশিয়াকে এড়িয়ে ক্যাস্পিয়ান সাগর–ককেশাস–ইউরোপ সংযোগ রুট তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই রুটে পণ্য পরিবহন বেড়েছে ৬৬০ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই রুট ভবিষ্যতে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক করিডর খুলে দিতে পারে।
পাহাড়, মরুভূমি ও সীমিত অবকাঠামো সত্ত্বেও মধ্য এশিয়া আবারও তার ঐতিহাসিক “সিল্ক রোড” ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাইছে। উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে চীন ও দক্ষিণে ইরান–আফগানিস্তান দ্বারা বেষ্টিত এই অঞ্চল আজ বিশ্বশক্তিগুলোর নতুন কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নয়—বরং রাশিয়া–চীন প্রভাবের ভেতর থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
বিআলো/এফএইচএস



