কুরআন–হাদিসের আলোকে রিযিক কমে যাওয়ার ২০টি কারণ
গুনাহে বন্ধ হচ্ছে রিযিকের দরজা
ইবনে ফরহাদ তুরাগ: অনেক মানুষ অভিযোগ করেন—পরিশ্রম আছে, আয় আছে, তবুও জীবনে বরকত নেই। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো কিছু গুনাহ, যেগুলো নীরবে মানুষের রিযিকের দরজা বন্ধ করে দেয়। কুরআন ও সহিহ হাদিসে এমন বহু আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর প্রভাব সরাসরি মানুষের আয়, বরকত ও জীবনযাপনের ওপর পড়ে।
ইসলামি শরিয়তের আলোকে নিচে রিযিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার এমনই ২০টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো:
সুদ ও হারাম উপার্জন
ইসলামে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ সুদের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন (সূরা আল-বাকারা ২৭৯)। আলেমদের মতে, যেখানে আল্লাহর যুদ্ধ ঘোষিত, সেখানে কখনোই বরকত থাকতে পারে না।
অকৃতজ্ঞতা ও নেয়ামতের অবমূল্যায়ন
আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে ধীরে ধীরে তা মানুষের জীবন থেকে তুলে নেওয়া হয়। কুরআনে বলা হয়েছে, কৃতজ্ঞ হলে রিযিক বাড়ানো হবে, আর অকৃতজ্ঞ হলে শাস্তি কঠিন হবে (সূরা ইবরাহীম ৭)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্কের সঙ্গে রিযিক বৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। সম্পর্ক ছিন্ন করলে রিযিক সংকুচিত হয় বলে আলেমরা মনে করেন (বুখারি ২৯৮৬)।
অসততা ও প্রতারণা
ব্যবসা-বাণিজ্যে মিথ্যা ও প্রতারণা সাময়িক লাভ এনে দিলেও দীর্ঘমেয়াদে রিযিক নষ্ট করে দেয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রতারণাকারী তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় (মুসলিম ১০২)।
সালাত ও ইবাদতে অবহেলা
আজান ও সালাতকে অবহেলা করলে রিযিকের বরকত কমে যায় বলে সহিহ বর্ণনায় এসেছে। ইসলামী গবেষকদের মতে, সালাত মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা ও বরকতের মূল উৎস।
গীবত ও অহংকার
অন্যের পেছনে নিন্দা করা (গীবত) এবং অহংকার মানুষের আমল ও বরকত নষ্ট করে। অহংকার সম্পর্কে হাদিসে জান্নাতে প্রবেশের কঠোর সতর্কতা দেওয়া হয়েছে (মুসলিম ৯১)।
যাকাত ও সদকায় কার্পণ্য
যাকাত আটকে রাখলে সম্পদ অপবিত্র হয়ে ধ্বংসের পথে যায় (সূরা তাওবা ৩৪–৩৫)। অন্যদিকে সদকা কখনো সম্পদ কমায় না; বরং তা বৃদ্ধি করে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে (মুসলিম ২৫৮৮)।
কর্মচারীদের হক নষ্ট করা
কর্মচারী ও শ্রমিকদের ওপর জুলুম করলে রিযিকের দরজা বন্ধ হয়। রাসূল (সা.) মজদুরের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন (ইবন মাজাহ ২৪৪৩)।
লোভ, হিংসা ও অলসতা
লোভ মানুষের অন্তরকে অতৃপ্ত করে তোলে। অন্যের রিযিক দেখে হিংসা করা এবং নিজ দায়িত্বে অলসতা রিযিক কমে যাওয়ার বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আলেমরা।
বাবা–মাকে অবহেলা
বাবা–মায়ের সন্তুষ্টির সঙ্গে রিযিক ও আয়ুর সম্পর্ক রয়েছে বলে হাদিসে এসেছে। তাঁদের অবহেলা করলে জীবনে অভাব নেমে আসতে পারে।
জুলুম ও মিথ্যা কসম
জুলুম করে অর্জিত সম্পদে বরকত থাকে না। ব্যবসায় বা অর্থের জন্য মিথ্যা শপথ করলে বরকত ধ্বংস হয় বলেও হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে (বুখারি ২০৮৭)।
তাকদির নিয়ে অসন্তুষ্টি
আল্লাহর সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ করাও রিযিকের দরজা বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। তাকদিরে সন্তুষ্ট থাকলে আল্লাহ মানুষের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করেন (তিরমিজি ২৫১০)।
নারী ও শিশুদের প্রতি জুলুম
সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণির প্রতি অন্যায় আচরণ করলে রিযিক ও শান্তি দুটোই চলে যায় বলে আলেমরা মত দিয়েছেন।
ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, রিযিক শুধু আয়ের পরিমাণ নয়; বরং এর সঙ্গে বরকত, মানসিক শান্তি ও পারিবারিক স্থিতিশীলতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গুনাহ থেকে ফিরে এসে তওবা, সালাত ও হালাল উপার্জনের পথে চললে আল্লাহ তায়ালা রিযিকের দরজা আবার খুলে দেন।
বিআলো/তুরাগ



