খাগড়াছড়ির পাবলাখালী মৌজাবন: স্থানীয়দের উদ্যোগে
৭০০ একর বন সংরক্ষণের ‘রোল মডেল
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অনন্য উদ্যোগ, ৫৯টি পাড়াবন নতুন আশার আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাবলাখালী মৌজায় স্থানীয় পাড়াবাসীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা ৭০০ একর পাড়াবন জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে একটি ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চলে স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ বন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে—যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়ও অত্যন্ত সহায়ক হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় প্রচুর বনভূমি থাকলেও বছরের পর বছর নির্বিচারে গাছ কাটা ও বন উজাড়ের কারণে এখন তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে অনেকক্ষেত্রে গ্রামবাসীর নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে ওঠা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) বা পাড়াবন/মৌজাবন টিকে আছে। পাবলাখালীর ৭০০ একরের মৌজাবন সেই তালিকায় সবচেয়ে বড় ও সফল উদাহরণগুলোর একটি।
এই বনে রয়েছে ৬টি ছড়া, অসংখ্য নালা, এবং বিভিন্ন প্রজাতির গর্জন, গামাঢ়ী, সিভিট, লম্বু, তেলসুর, চাপালিশ, বন জলপাই, উড়ি, খুদে জাম, হরতকি, বহেরাসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ।
এটি হয়ে উঠেছে হরিণ, বন মোরগ, শূকর, ভালুক, ময়না, টিয়াসহ অসংখ্য প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বনে গাছ, বাঁশ কাটাসহ যেকোনো শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এসব নিয়ম ভাঙলে স্থানীয় আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। তাদের দাবি—বন আছে বলেই ছড়া-ঝরনার পানিপ্রবাহ সচল থাকে, যা কৃষিকাজ ও পানীয় জলের উৎস হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খাগড়াছড়িতে এরকম ৫৯টি পাড়াবন রয়েছে বলেও জানা গেছে।
পাবলাখালী এলাকার বাসিন্দা অজিত বরন চাকমা বলেন, এই বন শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের জীবন ও জীবিকার অংশ। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োজন থেকেই আমরা এ বন রক্ষা করছি।
খাগড়াছড়ির সাংবাদিক রূপায়ণ তালুকদার বলেন, যেখানে হাজার হাজার একর বন কেটে ব্যক্তিগত লাভের জন্য বাগান করা হচ্ছে, সেখানে পাবলাখালীর মানুষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে বন রক্ষায় কাজ করছে—এটি সত্যিই অনুকরণীয়।
তিনি উল্লেখ করেন, ছড়া-ঝরনার পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ সহজ হয়েছে এবং সারাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বন সংরক্ষণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংহ্লামং চৌধুরী বলেন, এই বনে রয়েছে চারটি বড় ছড়া ও অসংখ্য গিরি-ঝিরি। পানির প্রবাহ খুবই আশাব্যঞ্জক। অনেক বিরল প্রজাতির মাতৃগাছ রয়েছে এখানে।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বাসস-কে বলেন, জেলায় অনেকগুলো পাড়াবন রয়েছে, যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাবলাখালী মৌজা বনটি খুবই সমৃদ্ধ এবং পাড়াবাসী আন্তরিকভাবে এটি রক্ষা করছেন।
তিনি জানান, পাড়াবনগুলো রক্ষায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রয়োজন হলে বন বিভাগও সহযোগিতা দেবে।
স্থানীয়দের দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু বন ইতিমধ্যে উজাড় হয়ে গেছে। তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন বন সৃষ্টির সময় এখনই।
বিআলো/এফএইচএস



