ঘরবাড়ি নদীগর্ভে, মানববন্ধনে ফুঁসে উঠলো গ্রামবাসী
এস এম অলিউল্লাহ,নবীনগর:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে উপজেলা প্রেসক্লাব চত্বরে চরলাপাং গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)-এর কাছে লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম নুর আজ্জম, ১নং ওয়ার্ডের সদস্য জীবন মিয়া, নিয়াজউল্লাহ, সাঈদ, আবু সিদ্দিক, কামাল মিয়া ও সুক্কু মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা অভিযোগ করেন,নবীনগরের নাছিরাবাদ এলাকার বালুমহলটি সরকারি নিলামের মাধ্যমে মেসার্স সামিউল ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাখাওয়াত হোসেন পায়েল প্রায় ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে বালুমহল ইজারা নিলেও শর্ত ভঙ্গ করে রাতদিন ড্রেজার বসিয়ে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছেন।
ফলে চরলাপাংসহ আশপাশের গ্রামগুলো দ্রুত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও কবরস্থান নদীতে তলিয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, বালুমহলকে ঘিরে “স্বর্ণমহল” নামে পরিচিত এই এলাকায় সশস্ত্র মহড়া চলে। অবৈধ উত্তোলনের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ভয় ও আতঙ্কের কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা একের পর এক সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হচ্ছেন।
পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম নুর আজ্জম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন “অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়।” উল্লেখ্য সম্প্রতি বাংলাদেশের আলো সহ জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় নবীনগরের বালুচক্র নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগীরা আজ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তাদের আশা, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হলে গ্রামবাসী নতুন করে ঘরবাড়ি হারানোর ভয় থেকে মুক্তি পাবে এবং নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে।
বিআলো/ইমরান