ঘর ভাড়া পরিশোধে বিলম্ব: মা-ছেলেকে ঘরে আটকে রাখলেন বাড়িওয়ালা
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাত্র তিনদিন বিলম্বে বাসা ভাড়া পরিশোধ না করায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরে মা-ছেলেকে ঘরের ভেতরে রেখেই বাইরে থেকে তালা মেরে দেন বাড়িওয়ালা। পরে পুলিশ এসে তালা খুলে তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রায়পাড়া এলাকার নির্ঝর ১৮ নম্বর বাসায়।
জানা গেছে, মৃত রামপ্রসাদ বর্মনের ছেলে ইমন বর্মন (১৭) মঙ্গলকাটা এলাকার আলহাজ মতিউর রহমান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন তিনি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝাল-মুড়ি বিক্রি করে লেখাপড়া ও সংসার চালান। গত চার বছর ধরে ৬ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়ায় ইউসুফ চৌধুরীর বাসায় থাকছিলেন তারা।
ইমনের পরিবার জানায়, জুন মাসের ভাড়া ৫ জুলাইয়ের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় কিছুদিন সময় চান ইমন। এরপর ৬ জুলাই বাসার গ্যাস সংযোগ কেটে দেন বাড়িওয়ালা। এবং ৮ জুলাই সকালে ইমন ও তার মাকে ঘরের ভেতর রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দেন।
ইমন জানায়, “তিন দিন আগে গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছিল। খেয়ে-না খেয়ে ছিলাম। আজ সকালে ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে গেছেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের জানালে পুলিশ এসে তালা খুলে দেয়।”
ইমনের মা জবা রানী বর্মন বলেন, “কয়েকদিন আগে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে একটু দেরি হচ্ছিল। এই নিয়ে এমন অমানবিক আচরণ কল্পনাও করিনি।”
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, “মাত্র তিন দিনের বিলম্বে ঘরে আটকে রাখা অমানবিক। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটত তাহলে দায় কে নিত?”
ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী এসে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসে পরিবারটি অন্য বাসায় চলে যাবে বলে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবু কালাম বলেন, “ঘরে মানুষ রেখে বাইরে তালা লাগিয়ে দেওয়া অমানবিক। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তালা খুলে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে।”
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। এমন অমানবিক আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা।
বিআলো/এফএইচএস