চাঁদপুর সদরের ১৪ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমেছে
পরিষদের সেবা: জন্ম–মৃত্যু নিবন্ধন, ভাতা ও গ্রাম আদালত চেয়ারম্যান-সদস্য আত্মগোপনে, সেবাপ্রার্থীরা সমস্যায়
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুর: ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থনপুষ্ট ১ হাজার ৬’শ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, দলীয় পদে নির্বাচনের সুযোগ থাকায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা ৫ আগস্টের পর থেকেই হামলা-মামলার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সেবাদান ব্যাহত হওয়ায় প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত আদেশ বুধবার ১৩ নভেম্বর গণমাধ্যমের হাতে আসে।
ওই আদেশে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদে জনসেবা ও সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখের স্মারকে জারীকৃত পরিপত্রের আলোকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ ও প্যানেল চেয়ারম্যানগণের অনুপস্থিতিতে নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাগণকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা হলেন:
- বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর ও বালিয়া ইউনিয়ন: উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত আমিন পাটোয়ারী
- চান্দ্রা, হানারচর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন: সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক
- আশিকাটি ও মৈশাদী ইউনিয়ন: উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: জামাল উদ্দিন
- ইব্রাহিমপুর, রাজরাজেশ্বর, রামপুর ইউনিয়ন: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন রায়
- তরপুরচণ্ডী, বাগাদি, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন: উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফতাবুল ইসলাম
শাকিল, জাহারা ও আমান নামে কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদে জমি নামজারির জন্য দ্বৈত প্রত্যয়নপত্র ও একটি নাগরিক সনদ নিতে এসেছিলাম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে আগের তুলনায় বর্তমানে সেবা পাচ্ছি।
জানতে চাইলে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের জনসেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে প্রশাসক নিয়োগ করে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
তিনি বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ হলো দেশের সব থেকে নিম্ন স্তরের এবং সব থেকে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো। যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ সরাসরি সেবা গ্রহণ করেন। এসব সেবা বিকল্প কারও মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব নয়। বর্তমানে সদর উপজেলায় সমস্ত প্রশাসকরা নির্ভরতার সহিত ইউনিয়নের নাগরিকদের সেবা প্রদানে দায়িত্ব পালন করছেন। আশা রাখছি ভবিষ্যতে তারা ইউনিয়নবাসীর প্রত্যাশিত কাজগুলো সঠিকভাবে পালন করবেন।”
এ প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর ও বালিয়া ইউনিয়নে প্রশাসক ও উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত আমিন পাটোয়ারী বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জনগণ প্রায় ৩০ ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত, বিভিন্ন ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফ খাদ্যপণ্য বিতরণ, ট্রেড লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে যারা ভাতা ভোগী, তাদের সনাক্তকরণ ও ন্যায্য মূল্যের তালিকা প্রণয়নে গরিব-দুঃখী অসহায়দের শনাক্ত করা এবং বিনা পুঁজিতে চাল বিতরণ প্রশাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও জানান, নিজের কর্মস্থলের পাশাপাশি প্রশাসক হিসেবে ৩টি ইউনিয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। এর ফলে সেখানকার সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত আমিন পাটোয়ারী বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদকে সরকার আলাদাভাবে দেখে থাকে। কারণ সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার কাজের ধরনের চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাজের ধরন কিছুটা ভিন্ন। সরকারের ত্রাণ বিতরণ থেকে তৃণমূলের যেকোনো ধরনের কাজে ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি।”
বিআলো/তুরাগ