চাকার ঘূর্ণনে বেঁচে থাকা: অদেখা কষ্টে দিন কাটে পরিবহন শ্রমিকদের
এইচ আর হীরা, বরিশাল : দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও শহরের অলিগলিতে প্রতিদিন কোটি মানুষের যাতায়াত। এই চলাচলের পেছনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এক বিশাল কর্মজীবী জনগোষ্ঠী—পরিবহন শ্রমিকরা। কেউ বাসচালক, কেউ ট্রাকচালক, আবার কেউ রিকশাচালক বা মেকানিক। চাকার ঘূর্ণনের সঙ্গে ঘুরে চলে তাদের জীবনের চাকা।
ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় তাদের কর্মব্যস্ততা। কেউ রাতভর গাড়ি চালিয়ে সকালে আবার রওনা দেন, অনেকের খাবার খাওয়ারও ফুরসত নেই। তবুও জীবনের ক্লান্তি ভুলে তারা ছুটে চলেন আশার খোঁজে।
বাসচালক ও ইমন পরিবহনের সুপারভাইজার মো. রাকিব বলেন, “দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি, কিন্তু কোনো সংগঠন বা সরকারের পক্ষ থেকে কখনো সহায়তা পাইনি।”
অন্যদিকে ইঞ্জিন মেকানিক কমল জানান, “সবকিছু নির্ভর করে গাড়ির চাকার উপর। গাড়ি না চালালে সংসার চলে না। দেশে তো এখন কার্যকর কোনো সরকার নাই, যারা বসিয়েছে তারাই তাদের মানে না।”
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এলপিজি গাড়ি মেরামতের কাজ করেন মেকানিক হৃদয়। তিনি জানান, চলতি বছরে এক বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে তাকে ১০ দিন জেল খাটতে হয়েছে, এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তবুও কাজের প্রতি ভালোবাসা হারাননি তিনি।
পরিবহন শ্রমিকদের দিনের শেষ হয় গভীর রাতে। নেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, নেই স্বাস্থ্যসুবিধা; দুর্ঘটনার ভয় তো নিত্যসঙ্গী। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের সুযোগ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ চালক, কন্ডাক্টর কিংবা হেলপার দিনে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেন।
বরিশাল জেলা শ্রমিক পরিবহনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “আমরা সরকারকে রেভিনিউ দেই, কিন্তু তার সুফল পাই না। ৫ই আগস্টের পর নথুল্লাবাদে কোনো চাঁদাবাজি নেই। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে যে শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো।”
সচেতন মহল বলছে, পরিবহন খাতের এসব শ্রমিকের রক্ত-ঘামে চলছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এমনকি প্রবাসী আয়ের প্রবাহও নির্ভর করে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থার উপর। তাই সড়কে চলাচলের গতি যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সেই শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
বিআলো/ইমরান



