• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    ছয় প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে অসহায় এক পরিবার-ফরিদগঞ্জে মানবেতর জীবনের করুণ গল্প 

     অনলাইন ডেক্স 
    26th Dec 2025 5:24 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    শামীম হাসান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ছয়জন শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এক অসহায় পরিবার। অভাব, অনাহার ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করে টিকে আছে পরিবারটি। পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির এই করুণ চিত্র যে কাউকে নাড়া দেয়।

    মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সংসারে মোট সাত সন্তান—পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে কেবল বড় মেয়ে মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) সুস্থ। বাকি ছয় সন্তানই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের সময় তারা সবাই স্বাভাবিক থাকলেও ৬–৭ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিক সক্ষমতা হারাতে থাকে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের দুঃসহ জীবনসংগ্রাম।

    প্রতিবন্ধী সন্তানরা হলেন—নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কেউই স্বাভাবিক জীবন গড়তে পারেননি। দাম্পত্য জীবন তো দূরের কথা, অনেকের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও কঠিন।

    পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাবা মনুহর। দিনমজুরের কাজ করে তিনি কোনো রকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হলে পরিবারটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বর্তমানে একটি ছোট ঘরে শিশু খাদ্য বিক্রি করেই আট সদস্যের পরিবারটির দিন কাটছে।

    প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন,
    “আমাদের শরীরে এত শক্তি নেই যে ভিক্ষাও করতে পারি। ঘরে বসে শিশুদের খাবার বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। এই টাকায় আটজনের খাবার জোগাড় করা অসম্ভব। অনেক দিন না খেয়েও থাকতে হয়।”

    বড় দুই ভাই নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম জানান,
    “আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এ ছাড়া কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা নেই। শুনি অনেক বিত্তবান মানুষ সাহায্য করেন, কিন্তু আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। বাঁচার জন্য সাহায্য চাই।”

    মা ফুল বানুর চোখে-মুখে ক্লান্তি আর গভীর বেদনা। তিনি বলেন,
    “একটা সুস্থ সন্তান মানুষ করতেই অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টা প্রতিবন্ধী সন্তান—এই যন্ত্রণা ভাষায় বোঝানো যায় না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। এখনও বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।”

    স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,
    “এই পরিবারে উপার্জনের মতো কেউ নেই। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। মানবিক কারণে সমাজের বিত্তবানদের এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো উচিত।”

    স্থানীয় স্কুলছাত্রী আয়েশা আক্তার, ছামিরা আক্তার মায়া ও ছিদরাতুল মুনতাহা জানায়,
    “ওনারা এখানেই দোকান করেন এবং এখানেই ঘুমান। যদি একটু বেশি মালামাল থাকত, তাহলে আরও কিছু আয় হতো।”

    এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন,
    “পরিবারটির সদস্যরা প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় রয়েছেন। কেউ বাদ পড়ে থাকলে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার বড়ুয়া বলেন,
    “আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।”

    অসহায় এই পরিবারটির চোখ এখন তাকিয়ে আছে সমাজের মানবিক মানুষ, প্রশাসন ও বিত্তবানদের দিকে। সামান্য সহযোগিতাই পারে ছয় প্রতিবন্ধী সন্তানের মুখে একটু হাসি ফোটাতে, ফিরিয়ে দিতে বেঁচে থাকার আশাটুকু।

    বিআলো/ইমরান

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    December 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    293031