• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    জনগণের জন্য সংস্কার, শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য নয় : ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার 

     dailybangla 
    02nd Aug 2025 8:39 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহুল প্রতীক্ষিত ঐকমত্যভিত্তিক সংস্কার কমিশন চালু করছে, তখন একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান: সংবিধান, নির্বাচন ও আইনসংক্রান্ত সংস্কারের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, অথচ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে এমন গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, জলবায়ু সহনশীলতা ও কৃষি প্রায় উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। এই ভারসাম্যহীনতা আমাদের রাজনীতির একটি গভীর সমস্যাকে উন্মোচন করে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর রাজনীতিকরা নিজেদের ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সংস্কারকে নয়।

    প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ঐকমত্য কমিশন অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ ও জাতীয় পুনর্মিলনের প্ল্যাটফর্ম। তবে যখন কমিশনের অধিকাংশ মনোযোগ নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে নিবদ্ধ থাকে যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মাতৃমৃত্যু, শিশুর অপুষ্টি, বিদ্যালয়ের মান, খাদ্যের মূল্যসাশ্রয়ীতা ও জলবায়ু বিপদের মতো ইস্যুগুলো অবহেলিত হয়, তখন সাধারণ মানুষের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা পাঠানো হয়: আপনার মৌলিক চাহিদাগুলো অপেক্ষা করতে পারে।

    গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের দরিদ্র-কেন্দ্রিক, ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ব্যবস্থা এক ভয়াবহভাবে অবহেলিত হয়েছে, কারণ শেখ হাসিনা তার তথাকথিত “মেগা প্রকল্প” নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থেকেছেন। এসব প্রকল্পকে জাতীয় অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হলেও বাস্তবে সেগুলো পরিণত হয়েছে দুর্নীতির বিশাল আখড়ায়। কোটি কোটি ডলার লোপাট হয়েছে গোপনীয় ঠিকাদারি ও রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে, যা কয়েকজন সুবিধাভোগীকে ধনী করলেও অধিকাংশ জনগণ, বিশেষত রাজনৈতিক বিরোধী, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ থেকে গেছে বঞ্চিত। চোখ ধাঁধানো অবকাঠামোর আড়ালে থেকে গেছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গ্রামীণ জীবিকার চরম অবনতি। এই ভুল উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির সুযোগ ব্যয় হয়েছে বিপর্যয়কর। লক্ষ লক্ষ শিশু পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত, কৃষক সংকটে পরিত্যক্ত, এবং রোগীরা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছে।

    বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে অভিজাত শ্রেণির কৌশলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। যে সকল সংস্কার ক্ষমতা দখলের নিয়ম নির্ধারণ করে, মেয়াদ নির্ধারণ করে, নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে—সেগুলোকে তাৎক্ষণিক ও অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়। আর যেসব সংস্কার গভীর প্রতিশ্রুতি, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ও সামাজিক রিটার্ন চায়। একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা, বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করা, শিশুর অপুষ্টি হ্রাস করা, অথবা কৃষকদের জলবায়ু ঝুঁকির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করা একরকম অবহেলাই করা হয়। এগুলো রাজনৈতিক সুবিধার জন্য পরে রাখা হয়।
    এই চিত্র একটি বেদনাদায়ক সত্যকে উন্মোচন করে: যে সংস্কারগুলো রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত লাভ, খ্যাতি বা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক সেগুলো প্রাধান্য পায়। আর যে সংস্কারগুলো দরিদ্র, নির্ভরশীল ও প্রান্তিক জনগণের উপকারে আসে, যারা ভোট বা শিরোনাম আনে না, সেগুলো পিছনে পড়ে থাকে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকে যে তাদের অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা কোথায় হবে, তাদের মেয়েটি বিদ্যালয়ে যেতে পারবে কি না, কিংবা তারা পরবর্তী জলবায়ু দুর্যোগে বাঁচতে পারবে কি না, তারা নির্বাচনী কমিশনের গঠন বা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাঠামো নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়।

    এই বিষয়গুলো কোনও গৌণ বিষয় নয়। এগুলো প্রকৃত গণতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ধারণার অংশ। শাসন ব্যবস্থার সংস্কার নির্বাচনে শেষ হওয়া উচিত নয় তা মানুষের জীবনের উন্নয়ন দিয়ে শুরু হওয়া উচিত।

    এ কারণেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের – বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান “জনগণ আগে” নীতির প্রতি একটি স্পষ্ট ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে। তার দৃষ্টিভঙ্গি কেবল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যকার সামাজিক চুক্তিকে পুনর্গঠনের একটি প্রতিশ্রুতি। বিএনপির এই সংস্কার পরিকল্পনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা যেখানে কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না, কোনো শিশু ক্ষুধার্ত থাকবে না বা বিদ্যালয় ছেড়ে দেবে না, এবং কোনো কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একা থাকবে না।

    স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা – সব ক্ষেত্রেই বিএনপির কর্মসূচি বিশ্বাস করে যে উন্নয়ন অবশ্যই সাধারণ মানুষের কল্যাণে পরিচালিত হতে হবে—রাজনৈতিক অভিজাতদের স্বার্থে নয়। বিএনপির এই সংস্কার চিন্তা শুধুমাত্র আইন পরিবর্তনের কথা নয়, বরং জীবন পরিবর্তনের কথা বলে।

    বাংলাদেশ আজ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন এমন একটি সর্বজনীন সংস্কার যার প্রভাব অনুভূত হবে প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে, প্রতিটি মাঠে এবং প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। যে সংস্কার মানুষের মর্যাদা, সুযোগ এবং আশার বার্তা নিয়ে আসে সেটাই প্রকৃত সংস্কার। এর কম কিছু হলে, তা হবে শুধুই পুরনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি।

    লেখক : ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার

    উপদেষ্টা, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

    বিআলো/ইমরান

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2025
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930