জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের সামনে ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’
সেমিনারে বক্তাদের আহ্বান: দলীয় চাপমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠনের সময় এখন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন—বাংলাদেশের প্রশাসনের সামনে এখন এমন এক সময় এসেছে, যখন দলীয় চাপ ছাড়াই আইন ও নিয়মের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বাস্তব সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের আহ্বান জানান তাঁরা।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই সেমিনারে জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
প্রধান অতিথি ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, “২০১৮ সালের আন্দোলনে শিশুকিশোরেরা রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু কেউ সেই বার্তা গ্রহণ করেনি। ২০২৪ সালে সেই চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। সিভিল সার্ভিসকে আর পুরোনো পথে ফেরা যাবে না।” তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে প্রশাসনের ওপর দলীয় চাপ নেই এবং আইন মেনে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা সর্বস্তরে কাজে লাগাতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “পূর্ববর্তী সময়ে দলীয়করণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছিল। এখন সময় এসেছে পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন পরিচালনার।”
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধে প্রশাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, করণীয় ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা উপস্থাপন করেন। এছাড়া বক্তব্য দেন—জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দা লাসনা কবীর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাফিউল ইসলাম।
বক্তারা জোর দেন—জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে জবাবদিহিমূলক ও মানবিক প্রশাসন গঠন করতে হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেন আমলাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করা হয়।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা আবেগঘন বক্তব্যে প্রশাসনের কাছে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন—শহীদ শাহরিয়ার আনাসের মা সানজিদা খান দ্বীপ্তি, শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী এবং শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, যিনি বলেন, “দক্ষতা, সততা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে প্রশাসনকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।”
স্বাগত বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের বার্তা দিয়েছে এবং প্রশাসনের সদস্যরা তখন সরকারের অনুপস্থিতিতেও দায়িত্বশীলতার উদাহরণ রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের শেষে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন—প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে জনসেবায় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন এবং শহীদদের ত্যাগ বৃথা যাবে না।
বিআলো/তুরাগ