জাতীয় প্রেসক্লাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সংবাদ সম্মেলন, বৈষম্য নিরসনে দাবি ৮ দফা
নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন, কেন্দ্রীয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড়ুয়া সম্প্রদায়ের উপেক্ষা ও নিপীড়নের নানা দিক তুলে ধরেন এবং ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
লিখিত বক্তব্যে নেতারা বলেন, বড়ুয়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ সম্প্রদায়, যাদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও সংস্কৃতি। দেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে এই সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য হলেও বর্তমানে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চরম বৈষম্যের শিকার।
নেতারা অভিযোগ করেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর বিগত ২৭ বছরে বড়ুয়া জনগোষ্ঠী কোনো সরকারি বা প্রশাসনিক প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও কমিটিতে বড়ুয়াদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। অথচ একই সঙ্গে তিনটি উপজাতি—চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা—নিয়মিতভাবে এই সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এমন বৈষম্যের ফলে শুধু বড়ুয়া নয়, অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী যেমন তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই, চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো সম্প্রদায়ও বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়োগ, শিক্ষাবৃত্তি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চলমান ৭০:৩০ কোটানীতি বড়ুয়াসহ অন্যান্য বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে কার্যত অগ্রাহ্য করে রেখেছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ওপর অতীতে ঘটে যাওয়া নির্যাতন ও নিপীড়নের বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও নির্যাতন, এমনকি অপহরণের ঘটনাও। তারা অভিযোগ করেন, এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে পূর্ববর্তী সরকারের সময় এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদদে।
সংবাদ সম্মেলনে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে: পার্বত্য চুক্তি সংশোধন করে বড়ুয়া প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সংসদীয় ও মন্ত্রণালয়ভুক্ত কমিটিতে বড়ুয়া প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত। জনশুমারিতে “বড়ুয়া” পরিচিতি আলাদা করে উল্লেখ করা। সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আসনে বড়ুয়া প্রতিনিধিত্বের সুযোগ। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে বড়ুয়া প্রতিনিধি যুক্ত করা। ঢাকার পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে বড়ুয়াদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বড়ুয়া প্রতিনিধিদের যথাযথ আমন্ত্রণ। বৈষম্য বিলোপ কমিশন গঠন। সংগঠনের নেতারা জানান, এসব দাবির বাস্তবায়ন না হলে তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. বাদল বরণ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন, প্রধান উপদেষ্টা ভদন্ত অদিতানন্দ মহাথেরো, কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, জিনপদ বড়ুয়া, অপু বড়ুয়া, জেলা সংগঠক নিপ্পন বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়া, পলাশ বড়ুয়া ও রুবেল বড়ুয়া প্রমুখ।
বিআলো/এফএইচএস