জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নারী ডাক্তারদের উদ্বেগ : স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক: একাধিক ফৌজদারী মামলার আসামী, যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক চুরি ও ভাংচুরকারী ছাত্রলীগের পদধারী স্বাচিপ সদস্য ডা. এইচ এম মাহমুদ হারুনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এ পুনঃপদায়ন করায় ইনস্টিটিউটে কর্মরত ডাক্তারদের মধ্যে বিশেষ করে নারী ডাক্তারদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ডাক্তারদের মধ্যে গ্রুপিং শুরু হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাকে পুনঃপদায়নের প্রতিবাদে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্য সেবা) বরাবর সম্প্রতি স্মারকলিপি প্রদান করেছে। বিভিন্ন নথিপত্র, প্রাতিষ্ঠানিক নোটিশ, সতর্ককরণ নোটিশ, আদেশ ইত্যাদি পর্যালোচনা ও সরেজমিনে ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে জানা যায়, এখানে পুনঃপদায়িত হওয়া ডা. এইচ এম মাহমুদ হারুন একাধিক নারী চিকিৎসক, প্রশাসন ক্যাডারের মহিলা কর্মকর্তাকে যৌন হয়রানি করেছেন, তার বিরুদ্ধে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক চুরি করা এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ স্বাস্খ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই প্রমানিত হয়েছে।
তিনি অতীতে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার অভিযোগে জেল খেটেছেন এবং বর্তমানে চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার যৌন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে একাধিক নারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চলে আসেন। নারী চিকিৎসকদের নিপীড়ন করায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ১৯ ডিসেম্বর তাকে সিরাজগঞ্জে এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে বদলী করে। নারী ডাক্তাররা স্বস্তি পান। কদিন না যেতেই একটি চক্র তাকে পুরস্কৃত করে পুনরায় একই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছে, যা নারী চিকিৎসকদের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী ব্যক্তিগত স্বার্থে হারুনকে ইনস্টিটিউটে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন এবং প্রশিক্ষণরত নারী চিকিৎসকদের অভিযোগ উপেক্ষা করছেন। উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. হারুনের পক্ষে পরিচালক, শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের হুমকি প্রদান করছেন। তিনি (ডা. মোহাম্মদ আলী) এবং ডা. হারুন দাবী করছেন যে তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার গভীর যোগাযোগ রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানসিক চিকিৎসার প্রধানতম প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ তদন্তপূর্বক এ সমস্ত চিহ্নিত অপরাধী এবং অপরাধীদের মদদ দানকারী ব্যক্তিদের অতিসত্বর অপসারণ করে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্তও প্রয়োজন। কেন, কার ইন্ধনে এরকম একজন অভিযুক্ত এখনো চাকুরি তো করছেই এমনকি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পদায়নও পাচ্ছে। এরূপ অপরাধী-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা তো অনেক দূরের ব্যাপার তার চিকিৎসা সনদ অব্যাহত থাকা মানে নারী রোগী এবং অন্যদের জন্য অধিকতর ঝুকি তৈরি করা, যার দায়-দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলেরা কোন রকমভাবেই এড়াতে পারেন না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ডা. এইচ এম মাহমুদ হারুনকে অতিসত্বর প্রত্যাহারের দাবি করা হয় স্মারকলিপিতে।



