জাতীয় সংসদ নির্বাচন; আগামীকাল থেকে রোডম্যাপ শুরু
রতন বালো: ঈদের ছুটির কারণে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে পারেনি কমিশন। ছুটি শেষে রবিবার থেকে ইসি নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা পথনকশা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও কাজ শুরু করবে সরকার। যার ভিতরে রয়েছে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। মাঝখানে সময় আছে ১০ মাস। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কতটা প্রস্তুত, কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, সেই আলোচনা সামনে এসেছে।
ইসি সূত্রের খবর, ঈদের ছুটির কারণে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে পারেনি কমিশন। ছুটি শেষে আগামীকাল রবিবার থেকে ইসি নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা পথনকশা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও কাজ শুরু করবে।
এমনটি জানিয়ে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মোটাদাগে নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শেষ করতে হয়। এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ঈদুল আজহার আগের দিন গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রদান করবে।’ এদিকে ঈদ ছুটির কারণে নির্বাচন কমিশন এখনো প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে পারেনি। আগামীকাল রবিবার থেকে ইসির কার্যক্রম শুরু হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কে এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এত দিন ইসির চিন্তা ছিল ডিসেম্বরে নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করে জুলাইয়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা। প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করার পর ইসি প্রস্তুতির জন্য আরো বাড়তি সময় পেল।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর ছুটি থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন কোনো আলোচনা করতে পারেনি। তবে নির্বাচন যখনই হোক, নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে হবে। রুটিন ওয়ার্ক ধরনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। ঈদের ছুটির পর নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি অন্যতম। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ইসি প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে। এ ছাড়া প্রয়োজনে যেকোনো সময় তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য (২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে) ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। আগে বাদ পড়া ও নতুন করে ভোটারযোগ্য মিলিয়ে ৬০ লাখের বেশি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তারা ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্য ধরে প্রস্তুতি শুরু করেছিল। এখন তারা সময় আরো বেশি পাচ্ছে। এতে তাদের জন্য আরো সুবিধা হবে।
বড় প্রস্তুতি কোনটার কী অবস্থা:
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরে ভোট হলে চলতি বছরের হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত সবাই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। কারণ, আইন অনুযায়ী, হালনাগাদের তথ্যের ভিত্তিতে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয় পরের বছরের ২ মার্চ। তবে এর আগে ভোট হলে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের ভোটাধিকার দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা ছিল। এপ্রিলে নির্বাচন হলে সেটার প্রয়োজন হবে না। কারণ, সাধারণত ভোটের দিনের আগে কমবেশি ৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের বাইরে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রাথমিক কাজ চলছে। নির্বাচনী আচরণবিধি, ভোটারকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালাসহ কিছু আইন ও বিধিমালা সংস্কারের কাজও চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন ও বিধি সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত হবে। আগামী জুলাই মাসে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেটি হলে জুলাই-আগস্ট নাগাদ আইনবিধি সংস্কার চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় ভোটের তফসিলের সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। আর প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এটি চূড়ান্ত করা হয় তফসিল ঘোষণার পর। এরপর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নির্বাচন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্য ধরে প্রস্তুতি শুরু করেছিল। এখন তারা সময় আরো বেশি পাচ্ছে। এতে তাদের জন্য আরো সুবিধা হবে। তিনি আশা করেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে।
বিআলো/তুরাগ