• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    জান্নাতের সুখ শান্তি 

     dailybangla 
    25th Feb 2025 6:13 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    মাস্টার রফিকুল ইসলাম রানা
    গত পর্বের পর থেকে অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ৪টি খাবারের কথা বলেছেন, ১. পানি ২. দুধ ৩. শরাব ৪. মধু।
    পানি : সাধারণত পৃথিবীর সমুদ্র ও নদীর পানি ঘোলা হয়ে থাকে। তার সঙ্গে বালু, মাটি এবং মাঝে মধ্যে নানা রকম উদ্ভিদরাজি মিশে যাওয়ার কারণে বর্ণ ও স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাতে কিছু না কিছু দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই জান্নাতের সমুদ্র ও নদীসমূহের পানির পরিচয় দেয়া হয়েছে এই যে, নির্ভেজাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি। তার মধ্যে কোনো প্রকার সংমিশ্রণ থাকবে না।
    দুধে : ‘তা পশুর বাঁট বা স্তন থেকে নির্গত দুধ হবে না।’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এ দুধ ঝর্ণার আকারে মাটি থেকে বের করবেন এবং নদীর আকারে প্রবাহিত করবেন। পশুর পালান বা বাঁট থেকে দোহন করে তারপর জান্নাতের নদীসমূহে ঢেলে প্রবাহিত করা হবে এমন নয়। এ কুদরতী দুধের পরিচয়ে বলা হয়েছে, ‘তার স্বাদে, কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ অর্থাৎ পশুর পালন থেকে নির্গত দুধে যে এক ধরনের গন্ধ থাকে, তার লেশমাত্রও এতে থাকবে না।
    শরাব : ‘পদদলন বা মাড়ানো দ্বারা ঐ শরাব নির্গত হবে না’ অর্থাৎ সে শরাব দুনিয়ার সাধারণ মদের মতো ফল পঁচিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নির্গত করা হবে না। বরং এটাও আল্লাহ তা’আলা ঝর্ণার আকারে সৃষ্টি করবেন এবং নদী-নালার আকারে প্রবাহিত করবেন। এর পরিচয় দিতে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, ‘তা হবে পানকারীদের জন্য অতীব সুস্বাদু।’ অর্থাৎ তা দুনিয়ার মদের মতো তীব্র এবং গন্ধযুক্ত হবে না। দুনিয়ার মদ তো এমন যে, যত বড় অভ্যস্ত মদখোরই তা পান করুক, মুখ বিকৃত না করে পান করতে পারে না। সূরা সাফ্ফাতে এর আরো পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে যে, তা পান করায় শরীরের কোনো ক্ষতিও হবে না এবং বুদ্ধি বিভ্রমও ঘটবে না। (আয়াত ৪৭) সূরা ওয়াকিআতে বলা হয়েছে যে, তার কারণে মাথাও ধরবে না কিংবা ব্যক্তির বিবেকও লুপ্ত হবে না। (আয়াত ১৯) এ থেকে জানা গেল যে, তা মাদকতাপূর্ণ হবে না, বরং শুধু স্বাদ ও আনন্দই দান করবে।
    মধু : মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধু হবে না অর্থাৎ ঐ মধুও ঝর্ণা থেকে নির্গত হবে এবং নদী-নালায় প্রবাহিত হবে। সুতরাং তার মধ্যে মোম, মৌচাকের টুকরা এবং মৃত মৌমাছির পা মিশে থাকবে না। বরং তা হবে নিখাদ ও নির্ভেজাল মধু।
    জান্নাতের এসব নিয়ামতের উল্লেখের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার উল্লেখ করার দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, এসব নিয়ামতের চেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীতে তাদের দ্বারা যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল জান্নাতে তাদের সামনে কখনো তার উল্লেখ পর্যন্ত করা হবে না। বরং যাতে তারা জান্নাতে লজ্জিত না হন সেজন্য আল্লাহ তাদের ঐ সব ত্রুটি-বিচ্যুতির ওপর চিরদিনের জন্য পর্দা টেনে দেবেন।
    জান্নাতীদের চেহারা ও বয়স : জান্নাতীদের চেহারায় কোনো দাড়ি-গোঁফ থাকবে না। তাদের বয়স হবে ত্রিশ থেকে তেত্রিশের মাঝামাঝি। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের চেহারায় কোনো দাড়ি-গোঁফ থাকবে না। চক্ষুদ্বয় লাজুক হবে। বয়স হবে ত্রিশ থেকে তেত্রিশের মাঝামাঝি।’ [তিরমিজি]
    প্রথম খাবার : জান্নাতীদের প্রথম খাবার ও পানীয় সম্পর্কে রাসুল (সা.) এর খাদেম সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সা. এর নিকট দাঁড়িয়ে ছিলাম। ইতোমধ্যে ইহুদীদের পাদ্রীদের মধ্য থেকে একজন পাদ্রী আসল এবং জিজ্ঞেস করল, যেদিন আকাশ ও জমিন প্রথম পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে? রাসুল (সা.) বললেন, পুলসিরাতের নিকটবর্তী এক অন্ধকার স্থানে। অতঃপর ইহুদি আলেম জিজ্ঞেস করল, সর্বপ্রথম কে পুলসিরাত পার হবে? তিনি বললেন, গরিব মুহাজিরগণ (মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারী)। ওই ইহুদি পাদ্রী আবার জিজ্ঞেস করল, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম তাদেরকে কী খাবার পরিবেশন করা হবে? রাসুল (সা.) বললেন, মাছের কলিজা। ইহুদি জিজ্ঞেস করল, এর পর কী পরিবেশন করা হবে? রাসুল (সা.) বললেন, এরপর জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে পালিত গরুর গোশত পরিবেশন করা হবে। এরপর ইহুদি জিজ্ঞেস করল, খাওয়ার পর পানীয় কী কী পরিবেশন করা হবে? রাসুল (সা.) বললেন, সালসাবিল নামক ঝরনার পানি। [মুসলিম]
    হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতি লোকেরা জান্নাতের খাবার পাবে এবং সেখানকার পানীয় পান করবে। কিন্তু সেখানে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন (পায়খানা-পেশাবের) প্রশ্ন উঠবে না, তাদের নাকে ময়লা জমবে না এবং তারা পেশাবও করবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের খাদ্যবস্তু হজম হয়ে যাবে এবং তা (ঢেকুর) থেকে কস্তুরির ন্যায় সুঘ্রাণ বেরোবে। তারা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এ ধরনের সব তাসবিহ ও তাকবির উচ্চারণ করতে থাকবে। (মুসলিম)
    সর্বোপরি এসব তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিরা সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি লাভ করবে। হাদিসে আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্পর্কে এসেছে : আবু সায়ীদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ
    ‘আল্লাহ তা’আলা জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে, উপস্থিত হে রব, সৌভাগ্য ও কল্যাণতো আপনারই হাতে। আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হবো না? আপনি আমাদের এমন নেওয়ামত ও সুখ-শান্তি দিয়েছেন যা কখনো অন্য কাউকে দেননি। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি কি তোমাদের এরচেয়ে উত্তম কোনো কিছু দেব? তখন তারা বলবে, হে প্রতিপালক! যা দিয়েছেন তার চেয়ে আবার উত্তম কোনো জিনিস আছে কী? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আজ থেকে আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর স্থায়ী হয়ে গেল। আর কোনো দিন তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবো না।’ [বুখারী ৭৫১৮, মুসলিম ২৮২৯]
    হাদীস থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারলাম আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্টি লাভ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। উদাহরণ হিসেবে আমরা এভাবে বলতে পারি, আপনি যদি কোনো এক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনে চাকরি করেন। আর সকল দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যান, তাহলে সে আপনার প্রাপ্য পুরোপুরিভাবে আদায় করবে। আপনাকে নিয়মের মধ্যে থেকে পদোন্নতি দিবে। এরচেয়ে বেশি কি? কিন্তু তিনি যদি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আপনাকে তার প্রিয় করে নেন, তাহলে ব্যাপারটা কত বড় হয়ে গেল। তখন শুধু নির্ধারিত বেতন আর পদোন্নতি নয়। পাবেন সব সুখ শান্তি, সম্মান, এমনকি কর্তৃত্বও।
    ঠিক একই ভাবে আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের জান্নাতের সুখ শান্তি দিবেন। কিন্তু যখন তিনি ঘোষণা করবেন আমি স্থায়ীভাবে তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম, তখন এটার মর্যাদা ও আনন্দ যে কত বিশাল হবে সেটা শুধু তখনই অনুভব করা যাবে। আল্লাহ তা’আলা দয়া করে আমাদের জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
    হাদীসে এসেছে : আবু সায়ীদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত. তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ
    ‘জান্নাতে একজন ঘোষক ঘোষণা দিবে : তোমরা সর্বদা সুস্থ থাকবে কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। তোমরা চিরদিন জীবিত থাকবে, কখনো মৃত্যু আসবে না। তোমরা চিরদিন যুবক থাকবে। বার্ধক্য কখনো তোমাদের স্পর্শ করবে না। তোমরা সর্বদা পরিতৃপ্ত থাকবে। কখনো ক্ষুধার্ত হবে না। আর এটা আল্লাহ তা’আলার সেই কথার বাস্তবায়ন। তাদেরকে ডেকে বলা হবে, ঐ হলো জন্নাত। তোমরা যা কাজ করেছো, তার বিনিময়ে এর উত্তরাধিকারী করা হলো। [মুসলিম ২৮৩৭]
    পরিশেষে আমরা বলতে চাই, আমাদের এই ক্ষনস্থায়ী জীবনে পৃথিবীর মায়ায় পরে দুনিয়ার নেয়ামত ভোগ করে, নেয়ামতদাতা মালিককে ভুলে না গিয়ে এই পৃথিবীতে যে পরীক্ষা দিতে এসেছি, এই পরীক্ষায় সফলতা অর্জনের মাধ্যমে পরকালীন জান্নাত লাভকরতে পারলেই এই জান্নাতের নেয়ামত আমরা ভোগ করতে পারবো। (ইনশাআল্লাহ)
    [তথ্য সূত্র : তাফসিরে ফী যিলালিল কুরআনে, তাফসিরে তাফহীমুল কোরআনে, তাফছিরে ইবনে কাছির, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিজি শরীফ]

    শিক্ষক, তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ শাখা।

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930