জুলাইয়ের গুলিতে পঙ্গু শফিকুল, জীবিকার আশায় একটি অটোরিকশা চান
নিজস্ব প্রতিবেদক: পেশায় অটোরিকশাচালক শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় হলেও পরিবার নিয়ে থাকতেন গাজীপুর শহরে। সেখানেই অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদের মিছিলে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে চিকিৎসার অভাবে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়।
শফিকুল জানান, ১৬ জুলাই গাজীপুর শহরের রাস্তায় অটোরিকশা নিয়ে ছিলাম। ছাত্রদের একটা মিছিল সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। আরেক দিকে পুলিশ আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আমি মাঝখানে পড়ে যাই। একপাশ দিয়ে সরতে গেলে পুলিশ গুলি করে। গুলি লাগে ডান পায়ের হাঁটুর নিচে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যাই।
আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ফেলে রাখা হয়। পরে নিটোরে (জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) পাঠানো হয়, সেখান থেকে সুস্থ ঘোষণার পর ফিরে যান গ্রামের বাড়ি।
কিন্তু সেখানে ইনফেকশন দেখা দিলে ফের ভর্তি হন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তার পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাধ্য হয়ে পা কেটে ফেলতে হয়।
পা হারানোর পর শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লেও শফিকুলের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস সেন্টার (বিএলবিসি)। প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজন করেছে, এবং মানসিক পুনর্বাসনে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করছে।
ব্র্যাক জানায়, তারা এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে উন্নতমানের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করেছে এবং ১৮৪ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। আগামী পাঁচ বছর এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, যার জন্য নির্ধারিত বাজেট ১২ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এককালীন এক লাখ টাকা সহায়তা পেলেও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, তিন মাস আগে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। এখনো টাকা পাইনি। ফোন দিলেই বলে—‘সময় লাগবে’। অথচ অনেকেই দুবার করে টাকা পেয়েছে। পরিচিতদেরই টাকা দিচ্ছে। যাদের কেউ নাই, তারা কিছুই পায় না। সব ভাগ করে খাচ্ছে। এদের বের করে দেওয়া উচিত।
চাকরি বা আয় না থাকায় চরম সংকটে পড়েছেন শফিকুল ইসলাম। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বড় মেয়ে স্নাতকে ভর্তি হয়েছে, ছোট মেয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে।
আকুতি জানিয়ে শফিকুল বলেন, নিজের চিকিৎসায় তিন-চার লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন ধারদেনা করে চলছি। যদি কেউ একটা অটোরিকশা দিয়ে সাহায্য করতো, তাহলে আবার চালিয়ে জীবন চালাতে পারতাম।।
গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করলেও কোনো মামলা করেননি শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিচার চাই। কিন্তু কার নামে মামলা করবো? কোথায় করবো? আমি তো এখন পঙ্গু। ঠিকমতো চলাফেরা করতেও পারি না।
বিআলো/এফএইচএস