জুলাই অভ্যুত্থান: শিক্ষার্থীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) দাবি করেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
গণমাধ্যমটি বলছে, এ সংক্রান্ত একটি কথিত ফোনালাপ রেকর্ড তাদের হাতে এসেছে, যেখানে শেখ হাসিনা বলেছেন, “যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।”
আল-জাজিরার তথ্যমতে, রেকর্ডিংটির সত্যতা নিশ্চিত করতে তারা আন্তর্জাতিক অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছে এবং ভয়েস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত আরও ৮৯, মোট মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৯ হাজার ৫০০ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা এক ফোনালাপে তার এক সহযোগীকে জানান, ‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি একদম। এখন লিথাল ওয়েপনস ব্যবহার করবে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই নির্দেশনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর অভিযান চালায়, যাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি আহত হন।
একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে তৎকালীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে অভিযান পরিচালনা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি বলেন, “যেখানে গ্যাদারিং দেখবে, সেখানে ওপরে থেকে… এখন ওপরে থেকে করা হচ্ছে, অলরেডি শুরু হয়ে গেছে কয়েকটা জায়গায়।”
যদিও নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে, ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরিফ আল-জাজিরাকে বলেন, “হাসপাতালের সামনেই হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আহতদের অনেকের গুলির ক্ষত অস্বাভাবিক ছিল, যা চিকিৎসকদেরও বিস্মিত করে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, এই ফোনালাপগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। আদালত শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে। চলতি বছরের ১০ জুলাই শেখ হাসিনা এবং তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। আগস্ট মাসে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণমাধ্যমটির আরও দাবি, শেখ হাসিনার সরকারের অধীন গোয়েন্দা সংস্থা এনটিএমসি ফোনালাপগুলো রেকর্ড করেছে। এ সংস্থার বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনীতিক এবং এমনকি সরকারের মিত্রদের ওপর নজরদারির অভিযোগও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আল-জাজিরাকে বলেন, “শেখ হাসিনা জানতেন তার ফোনালাপ রেকর্ড করা হচ্ছে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি জানি, জানি, সমস্যা নেই।’”
রিপোর্টে আরও বলা হয়, রংপুরে গত বছরের ১৬ জুলাই এক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যু দেশের ছাত্র আন্দোলনে বড় প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে, শেখ হাসিনার সহযোগী সালমান এফ রহমান পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ত্বরান্বিত করার বিষয়ে কথা বলেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাকে একাধিকবার চাপ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন পরিবর্তন করতে, যাতে বলা হয় আবু সাঈদের মৃত্যু ইটের আঘাতে হয়েছে, যদিও বাস্তবে তা গুলির কারণেই ঘটে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেন, “শেখ হাসিনা কখনোই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার।” তবে আল-জাজিরা দাবি করেছে, রেকর্ডিংটি সঠিক এবং এতে কোনো রকম সম্পাদনা বা বিকৃতি করা হয়নি। সূত্র: আল-জাজিরা
বিআলো/শিলি