জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম ১৫ আগস্ট: ছুটি বাতিল, নিরাপত্তা জোরদার
বঙ্গবন্ধুর ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ
সারা দেশে গ্রেপ্তার ১,৮৪৯ জন, ঢাকায় অস্ত্র উদ্ধার
গোপালগঞ্জে কড়া নিরাপত্তা, ঢাকায় ফানুস নিষিদ্ধ
জাসদের দুই ভাগের ভিন্ন অবস্থান, ধানমন্ডি ৩২-এ কড়া নিরাপত্তা
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ আজ ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে তাকে সপরিবারে হত্যা করে। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল।
এ হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি শেখ মুজিবের অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করেন। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই মর্মান্তিত ঘটনার ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালে অভিযুক্তদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। যদিও এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে রয়ে গেছে নানা বিতর্ক।
আজ ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসেছে দিনটি
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে।
তবে দিবসটি ঘিরে জাসদের দুই অংশ আলাদা বিবৃতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাসদের বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ খাটো করা যাবে না। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তারা।
অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি বলেছে, শোক দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয়ের শ্রদ্ধার আসন থেকে ম্লান করা যাবে না।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা বলয়
ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুলিশের এপিসি ও রায়টকার মোতায়েন করা হয়। অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি সড়ক ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেখানে মিছিল করে শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেন।
এ সময় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। এছাড়া ছাত্রশিবির কর্মী সন্দেহে দুজনকে এবং আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে আরও একজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে শুক্রাবাদ মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে, তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক হাজার ৮৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগের দিন গ্রেপ্তার হন এক হাজার ৮৫৮ জন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২৪ ঘণ্টায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার অভিযানে একটি তলোয়ার, লোহার পাইপ, তালা কাটার, লোহার চাবুক, কোঁচ, তীর, একনলা বন্দুক, কার্তুজসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।
গোপালগঞ্জে কঠোর নিরাপত্তা
বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আশপাশের জেলা থেকেও পুলিশ আনা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। প্রবাসে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাঁচজন হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। বিদেশে পলাতক পাঁচজনের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যুদণ্ড পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হয়, বাকিরা এখনও পলাতক।
গত বছরের ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। ছাত্রলীগ আগেই নিষিদ্ধ হয়। ফলে এবার ১৫ আগস্টে দলটির কোনো কর্মসূচি নেই।
বিআলো/নিউজ