• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    জেলে থেকেও ভারতে পালানোর ছক! আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ 

     dailybangla 
    31st May 2025 10:58 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    নজরুল ইসলাম জুলু: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর গ্রেফতার ও দেশত্যাগের খবরে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এমন এক উত্তপ্ত সময়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ-এর বিরুদ্ধে।

    অভিযোগ, তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করছেন, এবং এ নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে সূত্র জানা। সাবেক এই সংসদ সদস্য কালাম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। এর আগে বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। সবশেষ নির্বাচনে কালাম এমপি হলে তার স্ত্রী খন্দকার শায়লা পারভীনকে অনেকটা ‘গায়ের জোরে’ তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র করেন। তিনি এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর খননের জন্য ‘ভেকু কালাম’ হিসেবেও পরিচিত।

    উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা মিরপুলের শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে র‍্যাব তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাকে রাজশাহীতে এনে আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালতের নির্দেশে তিনি কারাগারে প্রেরিত হন। তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলা, পুরোনো খুনের মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের তিন মাসের মধ্যেই গত ২৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান, কিন্তু রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আবারও গ্রেফতার হন। তবে জামিনে মুক্তির পরপরই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে আবারও গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ৯ মে তাকে রাজশাহী থেকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়

    সাবেক এমপি হওয়ার সুবাদে কারাগারে তিনি ডিভিশন সুবিধা পান। তবে এই সুযোগকে ব্যবহার করে তিনি বাইরের ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। জানা গেছে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার উজানখলসি বিলে দেড়শ বিঘা জমি দখল করে তিনি পুকুর খনন শুরু করান, যেটি তার নির্দেশনায় স্থানীয় এক প্রভাবশালী বেল্লাল হোসেনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বাধা পেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত ফিরে আসতে বাধ্য হন। জিজ্ঞাসাবাদে কালাম স্বীকার করেন, তিনি নিজেই তার বোনকে ফোন আনতে বলেছিলেন।

    তিনবার পৌরসভার মেয়র ও একবার এমপি থাকা অবস্থায় আবুল কালাম আজাদ এলাকায় একপ্রকার ‘সন্ত্রাসী রাজত্ব’ কায়েম করেন, এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অলিখিত ‘গ্যাং’ গঠন করে তিনি বহু জমি, মাঠ, পুকুর দখলে নেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক, যার মধ্যে ৩০টি পুকুর, ৫০০ বিঘা জমিতে মাছচাষ প্রকল্প এবং কোটি টাকার গাড়িও রয়েছে। এছাড়াও পৌরসভা উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জলবায়ু তহবিল বাবদ আদায়কৃত ৫৫ লাখ টাকার ভ্যাট-ট্যাক্স সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলা করেছে।

    সূত্র মতে, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে তিনি জেলে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোন সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তার বোন লুকিয়ে একটি ক্ষুদ্র মোবাইল ফোন জেলে নিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়েন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে কালাম স্বীকার করেন যে তিনিই তার বোনকে ফোন আনতে বলেছিলেন।

    বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আবুল কালাম আজাদ জামিনে মুক্তি পেয়ে দিনাজপুর সীমান্ত হয়ে ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে তাকে রাজশাহী থেকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জামিন পাওয়ার পর দিনাজপুর থেকে হিলি সীমান্ত হয়ে তিনি ভারতে চলে যাবেন। এতে তাকে সহায়তা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল। পালানোর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।

    রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহ আলম খান বলেন,“কারাগারের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আইজি স্যারের নির্দেশে তাকে দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছে। তার ডিভিশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।”

    ভারত পালানোর গুঞ্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, “কারাগার থেকে কোনো আসামি ছাড়ার আগে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা হয়। ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোনোভাবেই মুক্তি দেওয়া হয় না। যারা এসব বলছে তারা না বুঝেই বলছে।”

    ঢাকার কোনো কারাগারে না পাঠিয়ে দিনাজপুরে পাঠানোর প্রশ্নে রাজশাহীর সিনিয়র জেল সুপার বলেন, ‘তাকে হাজিরার জন্য আনার প্রয়োজন হতে পারে। দিনাজপুর কাছাকাছি। আবার সব ঢাকায় এক জায়গায় পাঠালে সেখানে নানা কাহিনি করবে। তাই তাকে দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছে।’

    দিনাজপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মতিয়ার রহমানও বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে তিনি পালানোর পরিকল্পনা করছেন। তাকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।”

    আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তাকে ঘিরে যেসব অভিযোগ উঠছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং গোটা প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিচ্ছবি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে এবং সম্ভাব্য পালানোর চেষ্টা কতটা প্রতিহত করা যাবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031