টাঙ্গাইলে অনুমোদনহীন বহুতল ভবনের দাপট
ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে নগরবাসী, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল শহরে অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। নগর পরিকল্পনার নিয়ম অমান্য করে গড়ে তোলা এসব ভবন শুধু নান্দনিকতা নষ্ট করছে না-ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঝুঁকিও তৈরি করছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে শহরবাসীর মধ্যে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুযায়ী সাত তলা বা ৭৫ ফুটের বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের আগে পৌরসভার পাশাপাশি গণপূর্ত বিভাগ ও বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু টাঙ্গাইলের বাস্তবতা ভিন্ন-নকশা অনুমোদন, অগ্নিনিরাপত্তা, পরিবেশ ছাড়পত্র, পানি-নিকাশ পরিকল্পনা, কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না।
পৌরসভার তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩০টি ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, অথচ এ সময়ে আবেদন জমা পড়েছে ৫৫০টির বেশি। এর বাইরেও অনুমোদনহীন অসংখ্য ভবনের নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে।
ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা গেছে, টাঙ্গাইল মধুপুর ফল্টের উপর অবস্থিত-যা দেশের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এখানে ভয়াবহ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল জানান, ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবরের পর থেকে কোনো বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং অনুমোদনহীন ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পৌর প্রশাসক শিহাব রায়হান জানান, ভবন মালিকদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও অনেকেই তা উপেক্ষা করছেন।
জেলা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন অভিযোগ করেন, “সরকারি জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুর মোহাম্মদ রাজ্য বলেন, উচ্চ ফি ও ঘুষের কারণে অনেকে অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণে বাধ্য হচ্ছেন।
সচেতন মহলের দাবি, নগর পরিকল্পনার নিয়ম-কানুন অমান্য করলে টাঙ্গাইলের নগরায়ন আরও বিশৃঙ্খল হবে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই তারা দ্রুত কঠোর নজরদারি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিআলো/এফএইচএস