• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    টিউলিপের দুর্নীতির প্রমাণ কই? দুদকে আইনজীবীর চিঠি 

     dailybangla 
    24th Apr 2025 8:12 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ সাবেক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর কথা বললেও কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন না করে এবং যোগাযোগের চেষ্টায় ‘সাড়া না দিয়ে’ দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এই লেবার এমপির আইনজীবীরা।

    পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের মামলায় শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় তার আইনজীবীদের এক চিঠিতে এমন অভিযোগ তোলা হল।

    যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, গত ১৮ মার্চে একটি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর পরও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ টিউলিপের বিষয়ে ‘একটি প্রামাণ্য দলিলও’ হাজির করতে পারেনি বলে নতুন চিঠিতে অভিযোগ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ল ফার্ম স্টেফেনসন হারউড এলএলপি।

    ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের খবর সামনে আসছে। দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।

    এ ধারাবাহিকতায় পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় গত ১৩ এপ্রিল টিউলিপসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার একটি আদালত। সেই তালিকায় শেখ হাসিনা, টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামও রয়েছে।

    এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন লন্ডনে নিজের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ বলেছিলেন, তিনি ভুল কিছু করেছেন, এমন কোনো ‘প্রমাণ কোথাও নেই’।তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের’ শিকার। বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি দাবি করে সেদিন তিনি বলেন, তাকে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হতে হচ্ছে।

    তবে দুদক দাবি করেছে, ঢাকার পূর্বাচলে প্লট ও রূপপুর প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ অভিযোগের বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে টিউলিপ সিদ্দিককে তিন দফা নোটিস দিয়েছিলতারা; তবে তার সাড়া মেলেনি।

    টিউলিপের ঢাকার দুটি ঠিকানায় মাস দুয়েকের মধ্যে পাঠানো এসব নোটিসের ‘রেজিস্ট্রি’ চিঠি কেউ গ্রহণ না করায় প্রতিবারই ফেরত আসার কথা বলেছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

    নোটিসের চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুদক টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আয়কর নথিতে দেওয়া ঢাকার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেছে। দদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত ২৩ এপ্রিল বলেন, টিউলিপ নির্দোষ হলে কেন পদত্যাগ করলেন? “কেন তিনি তার আইনজীবীদের দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন? দুদক তার আইনজীবীকে ইমেইলের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশে এই মামলার আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।”

    ১৫ এপ্রিল তারিখে ইমেইলে টিউলিপের আইনজীবীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৮ মার্চ পাঠানো চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিকের “সুনাম ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হিসেবে পরিচালিত মিডিয়ায় ব্রিফিং এর সূত্র ধরে” ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগগুলো খণ্ডন করে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।

    “একইসাথে আমরা আপনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম যে, আপনারা যদি টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি কোনো যৌক্তিক, সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন পেশ করতে চান, তাহলে তা আমাদের জানাতে পারেন যেন আমরা আমাদের মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে যথাযথভাবে সাড়া দিতে পারি।

    “কিন্তু আপনি বা আপনারা আমাদের কোনো প্রশ্ন পাঠাননি কিংবা আমাদের চিঠির কোনো জবাব প্রদান করেননি। বরং আপনারা আবারও গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে মাননীয় এমপি সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পুনরায় ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন।”

    চিঠিতে বলা হয়, “বিবিসি প্রকাশ করেছে যে, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বিবিসিকে জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ পরিচালিত হচ্ছে এবং ‘টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে আদালত কার্যক্রম এড়িয়ে চলা উচিত নয়’। এ ধরনের প্রকাশ্য বিবৃতির পরও আপনি এখন পর্যন্ত মাননীয় এমপি সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পক্ষে একটিও প্রামাণিক নথি উপস্থাপন করেননি।” দুর্নীতি মামলায় টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারার কথা বলা হয়েছে তার আইনজীবীর চিঠিতে।

    সেখানে বলা হয়েছে, “১৩ এপ্রিল রবিবার ঢাকায় এক শুনানিতে আদালত আমাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যেখানে তাকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আপনি (দুদক চেয়ারম্যান) ব্রিটিশ মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে, যদি তিনি উক্ত সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হন, তবে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে রেড নোটিস ইস্যু করতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে, যদিও বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই।”

    টিউলিপের আইনজীবী বলছেন, বাংলাদেশি আদালতে অভিযোগ গঠন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, রেড নোটিস ইস্যুর ‘হুমকি’ এবং প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিপরীতে টিউলিপ সিদ্দিক বা তার আইনজীবীদের সঙ্গে একবারও যোগাযোগ না করা ‘ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার পরিপন্থি’।

    “এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে কি ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহন করছে।” স্টেফেনসন হারউড এলএলপি বলছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত ‘মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে’ যথাযথ প্রক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিকের মুখোমুখি হওয়া এবং স্বচ্ছভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা।

    “আমরা আপনার কাছে অনতিবিলম্বে আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং অভিযোগপত্রে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের পূর্ণ বিবরণসহ সংশ্লিষ্ট সকল সহযোগী প্রমাণ ও তথ্যাদি আমাদের সরবরাহের অনুরোধ করছি, যার মধ্যে আপনার কথিত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথি’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

    “এই অনুরোধের পাশাপাশি আমাদের মক্কেল দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তার বিরুদ্ধে চলমান অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করেন। এছাড়াও, এসিসির পক্ষ থেকে উত্থাপিত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং তাতে সৃষ্ট ক্ষতির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রেও আমাদের মক্কেল তার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করেন।”

    টিউলিপের আইনজীবীর পাঠানো নতুন চিঠির বিষয়ে দুদকের বক্তব্য জানতে পারেনি। তবে দুদক চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন গত ২২ এপ্রিল বলেছিলেন, “দুদক কেবল নথিপত্র ও বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ পরিচালনা করে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ যুক্তরাজ্যসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব।”

    বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপর রূপাপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপেরও নাম আসে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর টিউলিপ ও তার বোনোর পাওয়া ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।

    শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ সিদ্দিক।

    যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অবশ্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর টিউলিপের প্রশংসাই করেছিলেন; বলেছিলেন, টিউলিপের জন্য তার দরজা খোলা থাকবে। তবে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অবিলম্বে এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।

    প্লট দুর্নীতির মামলায় পরোয়ানা জারি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ১৫ এপ্রিল টিউলিপের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি মামলা করে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।  সূত্র: বিডি নিউজ

    বিআলো/শিলি

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031