ডিসেম্বরের আলোয় বিজয়ের স্মৃতি: শুরু হলো গৌরবের মাস
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিসেম্বর এলেই বাংলাদেশের মানুষ অন্যরকম আবেগে ভরে ওঠে। কারণ এই মাস শুধু একটি ক্যালেন্ডারের পাতা নয়, একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ১৯৭১ সালের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লাখো শহীদের আত্মবলিদান, মা-বোনের ত্যাগ আর বীরত্ব- সব মিলিয়ে ডিসেম্বর হয়ে ওঠে গৌরব, বেদনা এবং অর্জনের এক ইতিহাসময় অধ্যায়।
মুক্তিযুদ্ধের ডিসেম্বর: বেদনার ভেতর দিয়ে বিজয়ের পথচলা
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত। গেরিলা হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সেনারা আরও বর্বর হয়ে ওঠে। ১ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ঢাকার জিঞ্জিরায় একদিনে ৮৭ জন বাঙালিকে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করা হয়- যা ছিল দখলদার বাহিনীর শেষ দমে নৃশংসতার এক চিত্র।
এই সময় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীগুলোতেও যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। একই দিনে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানি সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো আগ্রাসী সেনা অপসারণ।
ডিসেম্বরের প্রতিটি দিন বাঙালিকে নিয়ে যায় ১৬ ডিসেম্বরের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, যে দিন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেয়।

বিজয় উদযাপনে দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন-
বিজয়ের মাসকে ঘিরে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
সাভারে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা-
১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিদেশি কূটনীতিকরাও এতে অংশ নেবেন।
জাতীয় পতাকা, তোপধ্বনি ও কুচকাওয়াজ-
সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
ঢাকা ও জেলা-উপজেলায় একত্রিশ বার তোপধ্বনি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাবেশ, জাতীয় সংগীত, ডিসপ্লে ও কুচকাওয়াজ
মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা
বিজয়মেলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন-
তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন-আবৃত্তি-রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন থাকবে জেলা-উপজেলায়।
এ ছাড়া সিনেমা হলে শিক্ষার্থীরা বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখতে পারবেন।
সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ খাবার ও প্রার্থনা-
হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী কেন্দ্রসহ বহু প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে। সব ধর্মের উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও স্মরণ-অনুষ্ঠান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষে নিয়েছে বিশেষ কর্মসূচি-
কালো পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া/প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে।
রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি-
বিজয় মাসের প্রথম দিনেই উদীচী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়নের আলোর মিছিলে অংশ নিচ্ছে সিপিবি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে বিএনপি তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
কেন ডিসেম্বর এত গভীর আবেগের?
ডিসেম্বর শুধু বিজয়ের কথা বলে না- শহীদদের রক্ত, মা-বোনের কান্না, শোক ও দুঃখের ইতিহাসও বহন করে। স্বাধীনতার যে সবুজ-লাল পতাকা আজ আমাদের সত্তার অংশ, তার প্রতিটি রং বয়ে আনে মুক্তিযুদ্ধের বেদনা ও গৌরব।
বিজয়ের মাস তাই শুধু উদযাপনের নয়- নিজেদের আরও মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও দায়িত্বশীল করার অঙ্গীকারেরও সময়।
বিআলো/শিলি



