ডেঙ্গুতে দেশে রেকর্ড মৃত্যু একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক
নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি
চলতি বছরে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জনে
পৌরসভাগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ। একই সময়ে নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আজ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৃত্যু হওয়া ১২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগেই মারা গেছেন ৫ জন, যা এ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২ জন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও পুরুষ সমান ছয়জন করে। বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৪ জনের বয়স ২৬-৩০ বছর, ৩ জনের ৩১-৩৫, ২ জনের ৩৬-৪০ বছরের মধ্যে।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৪০ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৫ জন, খুলনা বিভাগে ৫২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৮ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভোগে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জনে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নাজুক হয়ে গেছে। এখন যে অবস্থা তাতে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোনো নতুন ধরনের উদ্যোগ দেখা গেল না। সেই গতানুগতিক ধারাতেই চলছে সবকিছু। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
দেশে ২০০০ সালে যখন নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় তখন তা ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক রোগ। কিন্তু দিন দিন এটা ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত বছর থেকেই ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়িয়েছে ব্যাপকহারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৫৪ জন। আর ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৭৭ জন।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখানে বিশেষ করে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ আছে। কিন্তু দেশের অন্যত্র এটা প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পৌরসভাগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেই। আবার ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গায় ডেঙ্গুর চিকিৎসারও কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। চলতি বছর দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর অর্থ হলো, বেশির ভাগ রোগী একেবারের মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছেছে।
বিআলো/ইমরান