ঢাকায় বর্ষা মানেই জলাবদ্ধতা: অপরিকল্পিত নগরায়ণেই মূল দায়, তাহলে কী এবারও ডুববে ঢাকা?
রতন বালো: ঢাকার বন্যার প্রকোপ রাজধানীবাসী দেখেছিল ১৯৮৮-সালে। সেবছরের বন্যা ছিলো বাংলাদেশে সংঘটিত প্রলংকারী বন্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে সংঘটিত এই বন্যায় ঢাকার প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ এলাকা ডুবে যায় এবং স্থানভেদে এই বন্যাটি ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। এটি ছিলো এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষয়-ক্ষতিময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী গণ-মাধ্যমেও সেই সময় এই দুর্যোগটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এরপর ২০০০ খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হয়। যার ভিতরে যশোর, ঝিনাইদহ. চুয়াডাঙ্গা. কুষ্টিয়া, মেহেরপুর অন্যতম। অতি খরাপ্রবণ এসব এলাকায় নজিরবিহীন বন্যায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারপরে সবচেয়ে বড় বন্যা হয় ২০২২ সালে। সিলেট বিভাগে এই বন্যা হয়। সিলেট বিভাগের প্রায় শতকরা ৮২ ভাগ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও অনেক বেশি ছিলো। এদিকে বর্ষা এলেই ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে ওঠে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিও তলিয়ে যায় হাঁটু বা কোমর পানিতে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন, ব্যাহত হয় যান চলাচল ও দৈনন্দিন কার্যক্রম। চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ হতে পারে, যা নগর-দুর্যোগে রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতি বছর বেশকিছু প্রকল্প ও কর্মসূচি নেওয়া হলেও কার্যকর অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। সিটি কর্পোরেশনগুলো প্রতিবার বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও বাস্তবচিত্র প্রায় একই রকম থাকে। মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছেঅপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাল ও জলাশয় দখল এবং দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এসব কারণে পানি নিষ্কাষনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ হতে পারে, যা নগর-দুর্যোগে রূপ নিতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসনে সরাসরি ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এর বাইরে খাল, নর্দমা ও জলাশয় পরিষ্কারে ৩০ কোটি, খাল-পুকুর পুনরুদ্ধারে দুই কোটি, পানির পাম্প স্থাপনে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সবমিলিয়ে শুধু ডিএসসিসির জন্য ১২৩ কোটি টাকার কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এসব টাকা বাব রাদ্দ জনকল্যানে আসেনি। উল্টো জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। আব্দুল মজিদ যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা তিনি যেমনটি জানালেন।‘ ছোটবেলায় ঢাকায় এত পানি জমতে দেখিনি। এখন অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তা ডোবা হয়ে যায়। প্রতি বছর চিহ্নিত স্পটে এমন জলাবদ্ধতা দেখেও সিটি কর্পোরেশন সঠিক কোনো সমাধানের পথ নেয়নি। এবারও যে বর্ষায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ডুববে, জলাবদ্ধতা হবে; তা আগে থেকেই বলা যায়। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প হাউজ আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি উন্নয়ন ও ক্রয়ে বরাদ্দ রেখেছে ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া খাল উন্নয়ন, সীমানা নির্ধারণ ও বৃক্ষরোপণে ৩৮ কোটি টাকা, নর্দমা পরিষ্কারে ১১ কোটি টাকা, খাল পরিষ্কারে পাঁচ কোটি টাকা, খাল-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণে ১০ কোটি টাকা, পাম্প হাউজ রক্ষণাবেক্ষণে আট কোটি টাকা এবং লেক রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এত এত উদ্যোগ ও বাজেট থাকা সত্ত্বেও বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই একাধিকবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা— চলমান বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
জলাবদ্ধতার কারণ ও দায় কার :
বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় ঢাকার প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল এর চারপাশের নদী ও অসংখ্য খাল। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে অধিকাংশ খাল হয় বেদখল হয়ে গেছে, নয়তো ভরাট হয়ে সরু নালার আকার ধারণ করেছে। ঢাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার পেছনে প্রধানত দায়ী— অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রাকৃতিক খাল ও জলাধার দখল, ভরাট এবং দুর্বল পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো।
গবেষণা বলছে, বর্তমানে ৫৪টি চিহ্নিত খালের মধ্যে অন্তত ২৬টি রয়েছে অবৈধ দখলে। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে শহরেই জমে থাকছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১৫টি দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার করা গেলে ঢাকার জলাবদ্ধতার ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব।আমরা বেশকিছু জলাবদ্ধতা এলাকা চিহ্নিত করেছি। যেহেতু পানি নিষ্কাশনের পকেটগুলো বন্ধ, আমরা সেই পকেটগুলো পরিষ্কার করছি। কিছু কাটাকাটি করতে হবে পরবর্তীতে। আগামী অর্থবছরে আমরা এই নেটওয়ার্কটা তৈরি করব। এর পরের বছর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পানি নামার ব্যবস্থা হবে এমনটিইজানালেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এলাকাগুলো:
মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কালশী, পল্লবী, শিয়ালবাড়ি, রূপনগর, টোলারবাগ, আহমেদ নগর, পাইকপাড়া এবং মিরপুর ১১ নম্বর এলাকা জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এছাড়া পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ, রায়েরবাজার, পশ্চিম ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, আজিমপুর, নীলক্ষেত, বকশীবাজার, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, বাংলাবাজার, ধোলাইখাল, বংশাল, নবাবপুর, নাজিরবাজার, বকশীবাজার ও চুড়িহাট্টা জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। অন্যদিকে শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, খিলক্ষেত, উত্তরা, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মেরুল বাড্ডা, ভাটারা, কুড়িল, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি ২৭, আসাদগেট, দারুসসালাম রোড, বাংলামোটর, রাজারবাজার, শুক্রাবাদ, বিজয় নগর ও ফকিরাপুল এলাকা জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা :
ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। যদিও ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করছে সংস্থা দুটি। তবু কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়ে গেছে।অনেক ড্রেনে নেই পর্যাপ্ত ঢাল, আবার অনেক ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই। নিয়মিত দেখা যায় ড্রেনের মুখ বর্জ্যের স্তূপে বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। এদিকে বেশিরভাগ ড্রেনই বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলায় আটকে গেছে। বিশেষ করে পলিথিন জাতীয় পরিত্যাক্ত ব্যাগ ড্রেনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে থামিয়ে দিচ্ছে। এসব পলিব্যাগ শতবছরেও পরেওবিনষ্ট হয়ে না ফলে, পরিবেশ ধ্বংসে এই সব পলিব্যাগ মারাত্মক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
জলাশয় ও সবুজ ভূমি সংকট:
একটি বাসযোগ্য শহরের জন্য মোট আয়তনের ৩৫-৪০ শতাংশ জলাশয় ও সবুজ ভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ ঢাকায় জলাশয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশেরও নিচে। সবুজ ভূমি ৭ শতাংশের নিচে আর ৮০ শতাংশ এলাকা কংক্রিটে আচ্ছাদিত। ফলে ঢাকার ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য কোনভাবেই মান সম্মত নয়। এদিকে যত্রতত্র পলিথিন ব্যাগ ফেলার কারণে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে না পেরে জমে থাকে। যা জলাবদ্ধতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বারিধারা, আফতাবনগর, মেরাদিয়া, বাউনিয়া, বাড্ডা, আমিনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য জলাভূমি ভরাট হওয়ার কারণেও জলাবদ্ধতা বাড়ছে।এছাড়া পলিথিন, প্লাস্টিকসহ কঠিন বর্জ্য ঢাকার ড্রেন ও খালগুলোতে জমে পানিপ্রবাহ ব্যাহত করছে।
দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প হাউজ আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি উন্নয়ন ও ক্রয়ে বরাদ্দ রেখেছে ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া খাল উন্নয়ন, সীমানা নির্ধারণ ও বৃক্ষরোপণে ৩৮ কোটি টাকা, নর্দমা পরিষ্কারে ১১ কোটি টাকা, খাল পরিষ্কারে পাঁচ কোটি টাকা, খাল-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণে ১০ কোটি টাকা, পাম্প হাউজ রক্ষণাবেক্ষণে আট কোটি টাকা এবং লেক রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়
ওয়াসা থেকে সিটি কর্পোরেশনে হস্তান্তর আগে ঢাকা মহানগরীর প্রধান প্রধান ড্রেন লাইন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা এবং শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। ওই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীন এবং প্রায় দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল এবং ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। যে কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলো একে-অন্যের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ পেত। কিন্তু ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে রাজধানীর জলাবদ্ধতার সব দায় এসে পড়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপর। তারাও গত কয়েক বছরে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে কিন্তু এর সুফল পায়নি নগরবাসী। একসময় রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে ছিল ঢাকা ওয়াসা। পরে রাজধানীর সব নালা ও খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা গত ১৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সমস্যা যেন নগরবাসীর পিছু ছাড়েনি।জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। অবশ্যই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে এসব কাজের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তাই অন্যদের ওপর দায় চাপানোর কোনো সুযোগ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ই পারে ঢাকাকে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যেমনটি বলছিলেন অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
করণীয় কী
বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা মনে করছেন, জলাবদ্ধতা এখন শুধু মৌসুমি দুর্ভোগ নয়, এটি ক্রমবর্ধমান এক নগর-দুর্যোগ। জলাবদ্ধতা নিরসনে সবার প্রচেষ্টায় স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদের কর্মপরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।এসবে মধ্যে রয়েছে, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খাল পুনরুদ্ধার। দখল করা খালগুলো উদ্ধার করে সেগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। ১৫টি প্রধান খাল খনন করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।এছাড়া ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানটি এখনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সিটি কর্পোরেশনকে এই মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করে একটি সমন্বিত ও কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে পলিথিন ও অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্যের যত্রতত্র নিক্ষেপ বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যমান জলাধারগুলো সংরক্ষণ এবং নতুন জলাধার সৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টির পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
গবেষণা বলছে, বর্তমানে ৫৪টি চিহ্নিত খালের মধ্যে অন্তত ২৬টি রয়েছে অবৈধ দখলে। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে শহরেই জমে থাকছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১৫টি দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার করা গেলে ঢাকার জলাবদ্ধতার ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাল ও ড্রেন দখল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা— সবমিলিয়ে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ স্থবির হয়ে পড়ে বর্ষা মৌসুমে। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, জরুরি ভিত্তিতে খাল ও ড্রেনেজ অবকাঠামো সংস্কার এবং সবচেয়ে জরুরি একটি সুসংগঠিত কর্তৃত্বপূর্ণ ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
জনভোগান্তির ইতিকথা:
জলাবদ্ধতায় নিজেদের প্রতি বছরের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকি। দোকানে পানি উঠে গেলে লাখ লাখ টাকার মাল ক্ষতি হয়। সিটি কর্পোরেশন বলেই যায় কাজ চলছে, কিন্তু আমরা কোনো পরিবর্তন দেখি না। পানি উঠলে শুধু রাস্তা না, দোকানও ডুবে যায়। এতদিন কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারও ধারণা করছি বর্ষা মৌসুমে আমাদের নিচ তলার দোকানগুলো ডুবে যাবে।
ওয়ারী এলাকার শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতা হলে রিকশা চলে না, হাঁটাও যায় না। প্রতি বছর এমন ভোগান্তি দেখেও সিটি কর্পোরেশনের টনক নড়ে না কেন, বুঝি না।ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, বৃষ্টির দিন সকাল বেলা অফিস যেতে হয় হাঁটু সমান পানি মাড়িয়ে। জুতা হাতে নিয়ে হাঁটা লাগে। কেউ এই কষ্ট বোঝে না।