তরুণ প্রজন্মের নতুন হুমকি ই-সিগারেট, কারখানা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি
উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ধন্যবাদ জ্ঞাপন
রতন বালো: সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের (নেশা সৃষ্টিকারী নতুন পণ্য) ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলে ই-সিগারেটের প্রচারণা চালাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে শতকরা ২ ভাগ মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। এই যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়াতে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) নেতারা।
তারা বলেছেন, এই নির্দেশনার মাধ্যমে ই-সিগারেট আমদানী নিষিদ্ধের পাশাপাশি এবার দেশে এর যন্ত্রাংশের কারখানা স্থাপনও নিষিদ্ধ করা হলো। যা দেশের তরুণ সমাজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং সার্বিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই উপকরণ ব্যবহার বৃদ্ধির আগে এখনই নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। গতকাল মঙ্গলবার বাটা’র দপ্তর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে ই-সিগারেট (ভেপিং) এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেটের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
সম্প্রতি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহ এফসিএমএ এর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দেশে ই-সিগারেট/ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্য পণ্য উৎপাদনের কোন কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। চিঠিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইলেকট্রনিক সিগারেটকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যেই ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, হংকংসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরো ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয় বিক্রয়ের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল নং ২০৪-২০৫/২০০১ এ প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একই রায়ে কোর্ট দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের নতুন কোন কোম্পানি অনুমোদন প্রদান না করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটসহ অন্য সমমনা তামাক-বিরোধী সংগঠনগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই ই-সিগারেটের আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলো।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, এই নির্দেশনা তামাক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সরকারের আরো একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের এ নির্দেশনা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্নকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট সংশ্লিস্টদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি উক্ত নির্দেশনাটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে।
বাংলাদেশের তরুণদের আকৃষ্ট করতে ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে বলেও জানা গেছে। বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্য সামাজিক মাধম্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তারা তাদের নিজস্ব কিছু চিকিৎসকের মাধ্যমে যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে তামাক কোম্পানিগুলো।
এদিকে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর এক গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, শতকরা ৬৬.২ ভাগ ধূমপান ছেড়ে দেওয়া কথা ভেবেছেন কিন্তু তামাক কোম্পানি অপকৌশলের মাধ্যমে তাদেরক আবার ই-সিগারেটে আসক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে টিসিআরসি গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে।

তাই তরুণ সমাজকে রক্ষায় এখনই ই-সিগারেট বন্ধ করা জরুরি। এ লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এর আগে প্রয়োজন অধ্যাদেশ জারি করে ই-সিগারেট বন্ধ করে দিতে হবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারির বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে তামাক কোম্পানীগুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এ ছাড়াও যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেটের প্রসার বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোন আইন না থাকায় দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় চলছে। সিগারেট কোম্পানিগুলো ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর বলে তরুণদের আকর্ষণ করছে। ইতিমধ্যে ই-সিগারেটের ভয়াবতা থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য ভারতসহ বিশ্বের ৪২টি দেশে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের উপর বাধ্য-বাধকতা আরোপ করেছে।
বিআলো/তুরাগ