• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    তাজরীন ট্রাজেডির এক যুগ বিচার, সাক্ষ্যগ্রহণেই থমকে আছে 

     dailybangla 
    24th Nov 2024 2:42 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    বিআলো প্রতিবেদক: ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার একযুগ পেরিয়ে গেলেও কেবল সাক্ষ্যগ্রহণেই থমকে আছে বিচারকাজ। মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১৫ জন। অন্য সাক্ষীরা নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলাটির বিচার থমকে আছে বলে জানায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

    আলোচিত এ মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসরিন জাহানের আদালতে বিচারাধীন। মোট ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ২০১৬ সালে মামলার বাদী এসআই খায়রুল ইসলামসহ পাঁচজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। ২০১৭ সালে দুজন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে এ মামলায় কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মাত্র চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওইদিন সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

    এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

    সাক্ষী দেওয়ার জন্য বার বার সমন পাঠানোর পরও আদালতে আসছেন না সাক্ষীরা। তাদের আদালতে হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেও কোনো সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

    এদিকে গত ২২ অক্টোবরের আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন, মামলাটি দীর্ঘ নয় বছর যাবৎ সাক্ষীর জন্য অতিবাহিত হলেও রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার অভিযোগ পত্রের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি। অবশিষ্ট সাক্ষীর প্রতি বার বার জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সত্বেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারেনি। ফলে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় একদিকে যেমন মামলার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি অন্যদিকে আসামিপক্ষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণে রাষ্ট্রের ব্যয়ভার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১(২) ধারা অনুযায়ী যা কিছুই থাকুক না কেন, মামলার শুনানির সময় সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশ অফিসারের হবে। সাক্ষীকে উপস্থিত হবার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তামিলকারী পুলিশ অফিসারের প্রতি সমন প্রেরণের বিধান রয়েছে। মামলায় সাক্ষীকে আগামী ধার্য তারিখ উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থতার দায়ভার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার উপর বর্তাবে।

    বিচার শুরুর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি মামলাটির। সাক্ষ্যগ্রহণে থমকে থাকা মামলাটির দ্রত নিষ্পত্তি চান আসামিপক্ষও। আসামিপক্ষের আইনজীবী রোকেয়া বেগম বলেন, এ মামলায় বেশিরভাগ সাক্ষী আদালতে ভুল সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনও সঠিক না। দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে থাকলেও সেটা যথাযথভাবে শেষ হচ্ছে না। সাক্ষী যদি না আসে তবুও তো মামলার সুরাহা তো করা প্রয়োজন। কারণ অভিযুক্ত আসামিরা চাকরি ফেলে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। আইনগত দিক বিবেচনা করে মামলা নিষ্পত্তি হলে তারা নির্দ্বিধায় খালাস পাবেন।

    এ বিষয়ে ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) কালাম খান বলেন, মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার পেছনের রাষ্ট্রপক্ষের দায় রয়েছে। দীর্ঘসূত্রিতায় মামলার আসামি বা বাদী উভয় পক্ষের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

    বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সব মামলা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই মামলা এভাবে ঝুলে থাকবে না। দ্রুততম সময়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।

    উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৭ পোশাক শ্রমিক মারা যান এবং আহত হন দুই শতাধিক। কারখানাটিতে এক হাজার একশ ৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। নয় তলা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে সর্বাধিক ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকিদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

    ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়।

    মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

    ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে তাদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিলের পর, ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

    বিআলো/শিলি

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930