তারপরও নেওয়া হচ্ছে :টোল কয়রা ও পাইকগাছা ব্রিজের নির্মাণ ব্যয়ের ৪০ গুণ টাকা উত্তোলন
মুশফিকুর রহমান, কয়রা (খুলনা): বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা কয়রার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে কয়রা ও পাইকগাছার ব্রিজ টোল মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছে। কয়রার অধিকাংশ মানুষ সরাসরি সুন্দরবনের মাছ কাকড়ার সাথে সংযুক্ত থাকায় কয়রা এবং পাইকগাছা ব্রিজ হয়ে খুলনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ সকল মাছ কাকড়া রপ্তানি করে থাকে। ব্রিজ নির্মাণের ব্যয়ের ৪০ গুণের বেশি টাকা উত্তোলন করা হলেও টোল নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়নি কয়রার জনগণ।
টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, হয়রানি এবং দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। গত ৫ আগস্টের পর টোল আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেন। তবে কিছুদিন পর তা আবার শুরু হয়।
সেতুগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী অনেকেই জানান, ইজারাদারের নিয়োজিত কর্মীরা প্রায়ই অশোভন আচরণ করেন। যারা মাছ, সবজি বা অন্যান্য পণ্য পরিবহন করেন তাদের কাছ থেকে ১০ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা, ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা আদায় করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে হেনস্তাসহ মারধরের শিকার হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন এই দুটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দিনমজুর, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী। নির্ধারিত টোল ৫ বা ১০ টাকা হলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিন গুণ। গত বছর এমন এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে।
সেতু দুটি বর্তমানে ইজারায় পরিচালনা করছে একটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। টোল কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে দুর্ব্যবহার, অপমানজনক ভাষা ব্যবহার ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে। আগামী ৩০ জুন কয়রা সেতুর ইজারার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
কয়রাবাসীর আশা, এরপর সেতু দুটি টোলমুক্ত হবে। স্থানীয়দের ভাষ্য, ২০১০ সালে কয়রা ও শিবসা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই সওজ সেতু দুটি ইজারায় দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দুই কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয় মেসার্স আলী আকবর এন্টারপ্রাইজকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলী আকবর খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক। টোল আদায়ের জন্য ২০২৫ জনের একটি দল আছে যাদের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
দুর্যোগকবলিত এই অঞ্চলের বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা ও নদীভাঙনে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এর ওপর অতিরিক্ত টোল দিয়ে চলাফেরা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে এই সমস্যার সমাধান চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।
কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ হিরো বলেন, বটিয়াঘাটা ও আশাশুনিতে একই ধরনের সেতুগুলো টোলমুক্ত হলেও কয়রার মতো দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এখনও টোল আদায় চালু রয়েছে। যা সম্পূর্ণ অমানবিক। আমরা কয়রাবাসী টোলের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি চাই। উপকূলীয় কয়রার দরিদ্র মানুষ এখন আশায় তাকিয়ে আছেন কবে তাদের চলাচলের পথ থেকে এই অন্যায্য টোলের বোঝা সরে যাবে। তাদের প্রত্যাশা, ৩০ জুনের পর সেতু দুটি টোলমুক্ত হবে।